শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

প্রথম দিনেই ১০০ নির্বাহী আদেশ! 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য  প্রস্তুত আমেরিকা

শাহাব উদ্দিন সাগর

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য  প্রস্তুত আমেরিকা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথগ্রহণের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরে আসবেন। এ অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হবে এবং ট্রাম্পুভ্যান্স প্রশাসনের সূচনা হবে। ট্রাম্পের এই দ্বিতীয় অভিষেকের দিন শুরু হবে ওয়াশিংটন ডিসির ঐতিহাসিক সেন্ট জনস চার্চে প্রার্থনা দিয়ে। এরপর হোয়াইট হাউসে চা পানের আয়োজন থাকবে।

মূল অনুষ্ঠানটি হবে ক্যাপিটল হিল ভবনের পশ্চিম লনে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে থেকে সংগীত পরিবেশনা এবং উদ্বোধনী বক্তব্য শুরু হবে। এরপর ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স শপথ নেবেন।
শপথগ্রহণের পর ট্রাম্প তার নতুন প্রশাসনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য তুলে ধরবেন। এরপর তিনি ক্যাপিটল ভবনের প্রেসিডেন্টস রুমে গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করবেন এবং কংগ্রেস আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
দিনের শেষে, ক্যাপিটল হিল থেকে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রাতে তিনটি আনুষ্ঠানিক বল অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বক্তব্য দেবেন।
শপথ অনুষ্ঠান
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হলো প্রশাসনের ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি আনুষ্ঠানিকতা। এর মূল অংশ হলো নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ। শপথবাক্যে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে শপথ করছি যে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করব এবং আমার সর্বশক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংরক্ষণ, রক্ষা ও প্রতিপালন করব।’
এই শপথ নেওয়ার মাধ্যমে ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
এবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রায় ২ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেসের সদস্য, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামাও থাকবেন। তবে মিশেল ওবামা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ক্যারি আন্ডারউড। তিনি ‘আমেরিকা দ্য বিউটিফুল’ গেয়ে শপথ গ্রহণের মঞ্চে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এর পাশাপাশি, আমেরিকান ডিসকো গ্রুপ দ্য ভিলেজ পিপল এবং কান্ট্রি সংগীতশিল্পী লি গ্রিনউডও উপস্থিত থাকবেন। আমেরিকান ডিসকো গ্রুপ ভিলেজ পিপল তাদের জনপ্রিয় গান ‘ণগঈঅ’ পরিবেশন করবে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ গান ব্যবহৃত হয়েছিল।
অনুষ্ঠান দেখা যাবে যেভাবে
উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এ কারণে টিকেটের চাহিদা থাকে ব্যাপক। এই টিকেটগুলো অমূল্য! কংগ্রেস সদস্যরা অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকেট পান, যা তারা তাদের ভোটারদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন।
এ টিকেটগুলো বিনামূল্যে দেওয়া হয়, তবে পাওয়া বেশ কঠিন। আমেরিকানরা সরাসরি তাদের কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে টিকেট পেতে পারেন।
যারা সরাসরি অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন না, তাদের জন্য হোয়াইট হাউস এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ঐতিহাসিকতার একটি মিশ্রণ রয়েছে। এটি কেবল ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি আয়োজন নয়, বরং আমেরিকার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এদিকে প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তার প্রথম দিন থেকেই ১০০টি নির্বাহী আদেশের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ আদেশগুলো মূলত সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন নীতি অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। প্রথম দিনেই সীমান্ত, বহিষ্কার এবং অন্যান্য অগ্রাধিকারে বাস্তবায়ন করা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে তার পরিকল্পনার বিশদ বর্ণনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বেশির ভাগ নির্বাহী আদেশ ২০ জানুয়ারি অভিষেক ডে-তে কার্যকর হবে। তার শীর্ষ পরামর্শদাতা স্টিফেন মিলার রিপাবলিকান সিনেটরদের সামনে সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন আইনপ্রয়োগের জন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। তবে সিনেটর জন হোভেন বলেছেন, এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদেশ হতে পারে।
ট্রাম্পের দল এমন একটি বিস্তৃত নির্বাহী আদেশের তালিকা দ্রুত সই করার জন্য প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা, শক্তি উন্নয়ন, ফেডারেল কর্মী নিয়োগ নীতি, স্কুলে লিঙ্গ সম্পর্কিত নীতি, বাধ্যতামূলক টিকাদান এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় করা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দিনেই ১০০টি নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, মানবাধিকার, অভিবাসন নীতি এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা সামাজিক অস্থিরতা, বৈষম্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। নতুন প্রশাসনের প্রথম দিনে নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করা সাধারণ ঘটনা। কিন্তু ট্রাম্প এবং তার দল যা পরিকল্পনা করছেন, তা আধুনিক যুগে নজিরবিহীন। তিনি কংগ্রেসের আইন প্রণয়নের ধাপ এড়িয়ে সরাসরি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন। কিছু আদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে, আবার কিছু হয়তো শুধু নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝানোর জন্য প্রতীকী পদক্ষেপ হতে পারে। সিনেটরদের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের বেশকিছু নির্বাহী আদেশ বাতিল করে, ট্রাম্প প্রশাসন তার নিজের পরিকল্পনা কার্যকর করবে।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় মজা করে বলেছিলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের দিন একটি ছোট ডেস্ক ব্যবহার করবেন, যেখানে বসে নির্বাহী আদেশগুলো দ্রুত সই করবেন। যদিও এরকম কোনো প্রস্তুতির ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। রিপাবলিকান সিনেটররা আশা করছেন যে ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের পর পরই সিনেটের ভেতরে প্রশাসনিক নিয়োগগুলো অনুমোদন করবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্তে মেক্সিকো প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন করতে, অভিবাসন আটককেন্দ্র স্থাপন করতে এবং প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করেছে। সিনেটররা আশা করছেন যে, ট্রাম্প তার প্রথম শাসনামলের সময়ের মতোই সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করবেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো, মেক্সিকোতে অবস্থান করা বা অন্য দেশে আশ্রয় আবেদন করা অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ না করেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
সিনেটর জেমস ল্যাঙ্কফোর্ড, যিনি সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে আলোচনা করেছেন। বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে প্রায় ১ মিলিয়ন অভিবাসীকে লক্ষ্যবস্তু করবে, যারা সম্প্রতি দেশে প্রবেশ করেছেন, অপরাধে লিপ্ত হয়েছেন বা আদালত কর্তৃক বহিষ্কারের নির্দেশ পেয়েছেন।
ল্যাঙ্কফোর্ড বলেন, এটি সহজ লক্ষ্য। যারা সম্প্রতি এসেছেন, অপরাধ করেছেন অথবা আদালতের নির্দেশে দেশ ছাড়তে হবে তাদের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশগুলো পাল্টে দিতে পারেন। ইউরোপীয় কমিশন এরই মধ্যে এই আদেশগুলো বিশ্লেষণ করতে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে বোঝা যায়, কোন পরিবর্তনগুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের পরিকল্পিত নির্বাহী আদেশগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতিতে নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পিত ১০০টি নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সীমান্ত নিরাপত্তা, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। কংগ্রেসের আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া এড়িয়ে সরাসরি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার এই উদ্যোগ প্রশাসনিক কাঠামো ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ফলে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক কূটনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনে, তা সময়ই বলে দেবে।
গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। এরপর গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে মার্ক জাকারবার্গ দুইবার ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। এরই মধ্যে ট্রাম্পের কারণে ফেসবুকের বেশ কিছু নীতিরও পরিবর্তন করেছে মেটা। গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই, অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক এবং অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। মূলত দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব কাটানোর চেষ্টা করছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে ওপেন এআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে বেশ জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এর কারণ, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত টেসলা, স্পেসএক্স ও নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে স্যাম অল্টম্যানের শক্রতা। স্যাম অল্টম্যানের নেতৃত্বাধীন ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন ইলন মাস্ক। আর তাই স্যাম অল্টম্যানও চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলে ভিড়তে। প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে ওপেনএআইয়ের প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যান ও প্রধান পণ্য কর্মকর্তা কেভিন ওয়েইল ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন।
গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই, অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক এবং অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মতো প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্য তারকারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করলেও অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।
এদিকে ট্রাম্পের অভিষেক ঘিরে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গড়ে তোলা হচ্ছে ৩০ মাইল (৪৮ কিমি) লম্বা কালো অস্থায়ী বেষ্টনি। মোতায়েন হচ্ছে ২৫ হাজার বাড়তি আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা। অভিষেক অনুষ্ঠানে যে শত সহস্র দর্শকশ্রোতা আসবেন তাদের নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য বসানো হচ্ছে চেকপয়েন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে সোমবার ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর হোয়াইট হাউজে যাত্রা করবেন। তার আগে দিয়ে এ সপ্তাহান্তে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা এরই মধ্যে ঘটেছে। ট্রাম্প বিরোধীরা বিক্ষোভ করেছে। রিপাবলিকানদের সমর্থকরা সমাবেশ করেছে।
খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পও গতবছর নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই হামলার হুমকির মুখে আছেন। তাকে হত্যার চেষ্টা চলেছে একাধিকবার। গতবছর ১৩ জুলাইয়ে আততায়ীর বুলেট থেকে কোনওরকমে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। তার ডানকান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। আরেকবার গলফ ক্লাবে তাকে হত্যার জন্য ওঁত পেতে থাকা আততায়ী ধরা পড়ে যাওয়ায় বেঁচে যান ট্রাম্প।
আবার নতুন বছর ২০২৫ সাল শুরুর সময়েও সাধারণ আমেরিকানদের ওপর ঘটেছে কয়েকটি হামলার ঘটনা। এর মধ্যে একটি ঘটনায় নিউ অরলিন্সে নববর্ষ উদযাপনের মুহূর্তে মানুষের ভিড়ে সাবেক এক প্রবীণ মার্কিন সেনা ট্রাক চালিয়ে দিয়ে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছেন।
একইদিনে আরেক ঘটনায় ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের সামনে একটি টেসলা সাইবারট্রাক (বৈদ্যুতিক গাড়ি)-এ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে গাড়িচালক মারা যান। সাইবার ট্রাকের চালক ছিলেন সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্য।
এতসব ঘটনার ঘনঘটায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস স্পেশাল এজেন্ট ম্যাট ম্যাকুল বলেছেন, আমরা প্রচ- হুমকির এক পরিবেশের মধ্যে আছি।
ট্রাম্প এবং তার সঙ্গে কংগ্রেসের অন্যান্য সদস্যরা যেখানে শপথ নেবেন এবং অন্যান্যরা যারা তা দেখবেন, সেই জায়গাটি হচ্ছে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিল- যেখানে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে ঘটেছিল তা-ব। ট্রাম্পের হাজার হাজার সমর্থক ভবনের জানালা ভাঙচুর করেছে আর আইনপ্রণেতারা জান নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর চেষ্টাতেই ঘটেছিল ওই দাঙ্গা-হাঙ্গামা।
যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। যে কাজটি ট্রাম্প ২০২০ সালে করেননি। বরং তিনি উল্টো নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন।
এবারে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে কোনও সুনির্দিষ্ট বা সমন্বিত হুমকি আছে কিনা সে সম্পর্কে কিছু জানেন না বলেই জানিয়েছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন, কোনও আততায়ীর একক হামলার আশঙ্কাতেই মূলত তারা উদ্বিগ্ন। যেমনটি ঘটেছে নিউ অরলিন্সে কিংবা গত সপ্তাহের দুটি পৃথক ঘটনায়। ক্যাপিটল পুলিশের তথ্যমতে, একটি ঘটনায় এক ব্যক্তি ক্যাপিটল ভবনে চাপাতি নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরেক ঘটনায় আরেকজন ব্যক্তি ক্যাপিটল ভবনের কাছে আগুন জালানোর চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল পুলিশ প্রধান থমাস মাঙ্গার নিরাপত্তা বিষয়ক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এরকম একক আততায়ীর হামলার হুমকিই হচ্ছে আগামী সপ্তাহজুড়ে আমাদের সবচেয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকার সবচেয়ে বড় যৌক্তিক কারণ।
 

শেয়ার করুন: