
ছবি: সংগৃহীত
বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে চার দিন ধরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে ২০৩৫ সালের বাংলাদেশের রূপরেখা। ভবিষ্যতে পলিসির ধারাবাহিকতা থাকবে, সেটি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও এতে সম্পৃক্ত করা হয়।
আয়োজক সংস্থা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানায়, এই সম্মেলনে দেশে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের একটি পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। এরফলে আগামী দিনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হয়েছে।
সম্মেলন শেষে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব অর্জনের কথা তুলে ধরেন বিডার ‘হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট’ নাহিয়ান রহমান। তারমতে, সম্মেলনের সাড়ে ৪শ মতো বিদেশি বিনিয়োগকারী এসেছেন। তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা নিয়ে গেছেন। তাদের সঙ্গে দেশি বিনিয়োগকারী এবং সরকারের একটি সংযোগ বা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। তবে বিনিয়োগ বাস্তবায়ন হতে ১৮ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। ফলে এই সম্মেলনের নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং বিডার মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অনুবিভাগের নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব।
সম্মেলন শেষে একই ভেন্যুতে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী বলেছে তাদের ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। একইভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে তারা ক্ষমতায় গেলে বিনিয়োগের স্বর্গ তৈরি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিয়ান রহমান বলেন, এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদে পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। এরমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ করা হবে। বিনিয়োগ পেতে ধারাবাহিক মনিটরিংও থাকবে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী যারা বাংলাদেশে এসেছেন, তারা যেন সত্যিকারের বিনিয়োগ করেন, সেজন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবো। তারমতে, উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় নেন। ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধরে ধরে তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। আমাদের এখানে সাড়ে ৫০০ রেজিস্ট্রেশন ছিল। এরমধ্যে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ বিদেশি প্রতিনিধি এসেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের দু’জন প্রতিনিধিও এসেছেন। পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীর তথ্য পরবর্তীতে জানাব।’
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন। যেমন- নীতির ধারাবাহিকতা ও সম্পদের সহজলভ্যতা অন্যতম। এছাড়াও দুর্নীতির মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে তারা জানান। তিনি বলেন, অস্বীকার করা যাবে না দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। তবে তা দূর করার চেষ্টা চলছে।
নাহিয়ান রহমান বলেন, বিদেশিরাও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান চায়। তাই বিনিয়োগে স্বস্তি আনতে দাপ্তরিক ভোগান্তি দূর করা হচ্ছে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রমে ধীরগতি এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু এনবিআর নয়, সরকারি সেবায় ধীরগতি আছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের জন্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এনবিআরের গ্রীণ চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামিট উপলক্ষ্যে পোশাকখাতের চীনা প্রতিষ্ঠান হান্ডার সঙ্গে ১৫ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশি আরেকটি কোম্পানি শপআপ ১১ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য অর্জন : আয়োজকরা জানান, এবারের সম্মেলনে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সম্ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি সহযোগিতা প্রতিশ্রুতি ও নীতির ধারাবাহিকতার আশ্বাস দেওয়া হয়। ফলে সম্মেলনে বেশ কিছু মাইলফলক অর্জন রয়েছে। এরমধ্যে বিশাল সংখ্যক দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মার্কিন কোম্পানি স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার সঙ্গে বেসামরিক চুক্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠান মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। চীনের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্পেনের পোশাক জায়ান্ট ইনডিটেক্সের। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া মাচেইরাস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাত করে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
চীনের খ্যাতনামা পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশে ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় যা ১ হাজার ৮শ কোটি টাকা। শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন ইস্যুতে আইএলওর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। দুবাইভিত্তিক জায়ান্ট কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। গ্রামীণফোন ও লাফার্জ হোলসিমও বড় বিনিয়োগ করতে চায়। বিখ্যাত কোম্পানি জিওডারনো ও এক্সিলারের এনার্জি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
এছাড়াও এবারের সম্মেলনে উদ্যোক্তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এসব অঞ্চলে তারা বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। বিনিয়োগের জন্য আরেকটি সমস্যা হলো পলিসির ধারাবাহিকতা থাকে না। কিন্তু বিভিন্ন পলিসির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এবারের সম্মেলনে তিনটি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এগুলো হলো- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি। রাজনৈতিক দলগুলো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছে বলে জানান বিডার চেয়ারম্যান।