খাইরুল ইসলাম পাখি
তাইতো! আমি কে যে আপনি আমার কথা শুনবেন? আমি কে যে আপনি আমার জন্য আপনার ইচ্ছেকে অবদমন করবেন? আপনার রুচির মরু ভা-ারে জল ঢালার আমিই বা কে? আপনার জীবন আপনার। আপনার অভিরুচির নিয়ন্ত্রক আপনি নিজে। আপনার সুখ আপনার বিনোদন একেবারেই আপনার নিজস্ব। এ ব্যাপারে আপনি কাউকে কিছুতেই তোয়াক্কা করেন না। এই যে ধরুন আপনি মোবাইল ফোনে লাইভ করতে ভালোবাসেন। এটা আপনি করতেই থাকেন আদ্যোপান্ত না ভেবেই। আপনার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। কারো ঘরে আপনাকে নিমন্ত্রণ করা হলো আর আপনি ঘরে ঢোকার আগে থেকেই শুরু করে দিলেন লাইভ। আপনার কি একবারও মনে হলো না যে ওই গৃহের লোকজনের অনুমতি নেয়া দরকার ছিলো? তারা আদৌ তাদের গৃহকোণ গোটা পৃথিবীকে দেখাতে চাই কি না? আপনার কি মনে হয় না এতে করে অন্যদের প্রাইভেসি নষ্ট হয়? এ থেকে তো নানা রকম অসন্তোষেরও জন্ম হতে পারে।
একদিন আপনি এক বিয়ের বাড়িতে গেলেন এবং শুরু করে হয়ে গেল আপনার লাইভ। আপনার এই মূর্খের মতো ক্যামেরা চালানো কতজনের কত অনাকাঙ্খিত বিষয় আমজনতা প্রত্যক্ষ করল। কেউ হয়তো বড় হা করে হাড্ডি খাচ্ছে, কারো কোন অঙ্গ হয়তো অশ্লীলভাবে আপনার অজ্ঞতার কারণে দৃশ্যমান হলো, কেউ হয়তো পেট চুলকাচ্ছে বা নাক পরিষ্কার করছে। এগুলো বাদ দিন আপনি কি যাদের অনুষ্ঠান তাদের অনুমতি নিয়েছিলেন লাইভ শুরু করার আগে? তারা আদৌ কি তাদের এই অনুষ্ঠান সবাইকে দেখাতে চান? অনেকেই তো আপনার মাধ্যমে তাদের এই অনুষ্ঠান দেখে তাদের প্রতি মনঃক্ষুন্ন বা ঈর্ষান্বিতও হতে পারেন।
কোন ঘরোয়া অনুষ্ঠানে গিয়েও আপনি একই কাজ করেন। কেউ হয়তো গাইছে, কেউ কবিতা পড়ছে, কেউ হয়তো নাচছে, আপনি তাদের অজান্তেই তাদের অনুমতি ছাড়াই লাইভ শুরু করে দিলেন অথবা ভিডিও করলেন পরে যেটা আপনি আপনার ওয়ালে ছেড়ে দিবেন! এটা কি ঠিক হলো বলুন? এটা কি ঠিক কাজ? হ্যাঁ কোন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী যখন কোন মঞ্চে বা ফরমাল কোন অনুষ্ঠানে একেবারে তৈরি হয়ে পারফরমেন্স করেন সেটার ভিডিও করেন বা লাইভ দেন সেটা হয়তো কিছুটা ভিন্ন। কিন্তু একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে তো শিল্পীর সাথে আনুষঙ্গিক আয়োজনগুলো ঠিক থাকে না কিংবা প্রস্তুতিও অনেক সময় ঠিকঠাক থাকে না। আর তাছাড়া আপনি যে ক্যামেরা চালাচ্ছেন আপনি তো প্রশিক্ষিত একজন ক্যামেরাম্যানও না।
একটি মৃত বাড়িতে যেয়েও আপনি অদম্য। মৃত ব্যক্তির ছবি দিয়ে আপনার লাইভ শুরু হয়। মৃতের আত্মীয় বা স্বজনেরা কি আপনাকে বলেছে এটা করার জন্য? আপনার এই অতি উৎসাহপনার সাথে তাদের কি সায় বা দায় আছে?
আরেকদিন আপনি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেন এবং আয়োজকদের অনুমতি ছাড়াই আপনি আপনার লাইভ নামক কাজটি শুরু করে দিলেন। তারপর আবার হঠাৎ করেই কারো কারো ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করে দিলেন। যাকে প্রশ্ন করলেন তার হয়তো কোন প্রস্তুতি বা ইচ্ছেও ছিল না এই অনুষ্ঠানে কিছু বলার। হ্যাঁ, আপনি যদি সাংবাদিক হন কিংবা আপনার যদি অ্যাসাইনমেন্ট থাকে অথবা যা ভিডিও করছেন তা যদি আপনার চৌহদ্দি হয় বা নিজস্ব গন্ডি হয়ে থাকে তবে আলাদা কথা। এছাড়া কোন সুন্দর স্থান বা দর্শনীয় কিছু উপস্থাপন করবেন যেটা প্রসিদ্ধ বা অনেকের অজানা, যার কারণে অন্য কারো কিছুতে হস্তক্ষেপ করা হবে না এবং দর্শকদেরও যা কাজে লাগতে পারে তাহলে ঠিক আছে। কিংবা আপনার ব্যবসাকে প্রসার করতে আপনি লাইভ বা ভিডিও এর সাহায্য নিচ্ছেন।
আমার তো মনে হয় এই লাইভ বা ভিডিও করার আগে নিজের সন্তান বা পরিজনদেরও অনুমতি নেয়া আবশ্যক বা জরুরী। এমনকি অন্যের গায়ে হলুদ, বিয়ে, জন্মদিন, এসবের ভিডিও বা স্টিল ছবি তোলা কিংবা নিজের ওয়ালে পোস্ট দেয়ার আগেও তাদের অনুমতি নেওয়া এবং তাদের জ্ঞাতসারে করা ভদ্রোচিত।
শুরুতেই বলেছি আমি কে? যে আপনি আমার কথায় গা লাগাবেন। আমি শুধু আমার ভাবনাটা উপস্থাপন করছি মাত্র। যা নেয়া বা না নেয়া নিতান্তই আপনার বিষয়। আমার এক বন্ধু একদিন আমাকে বলল, ওর বোন ওদের মায়ের অসুস্থতার ভিডিও ধারণ করেছিল এবং কিছু ছবি তুলেছিল। মায়ের মৃত্যুর পর যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও প্রকাশ করেছিল। কি ভেবে করেছে সেটা ওই জানে। তারপর বন্ধুটি বোনকে যখন বলল মায়ের এমন অসুস্থ অবস্থার ছবি বা ভিডিও আমাদের মাঝেই থাকুক না। মা জীবিত থাকলে তো এসব তারও হয়তো ভালো লাগতো না যে, তার এই অসহায় মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও সবাই প্রত্যক্ষ করছে। এসব শুনে ওর বোন নাকি পরক্ষণেই সেসব ডিলিট করে দেয়।
কিন্তু আপনি আপনার জীবন থেকে কোন অভ্যাস বা কুঅভ্যাস ডিলিট করবেন তার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই। অন্যরা সবাই কাছে বা দূরে থেকে নিছক ধরিয়ে দেবে হয়তো। কি দরকারই বা বলুন অন্যের ব্যক্তিগত বলয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের? নিজেকে দমানো কি খুবই কষ্টের? একদমই না। শুধু ভাবুন আপনার এই নির্বুদ্ধিতা ও খামখেয়ালিপনা অন্যের জন্য বিব্রতকর হতে পারে, হতে পারে ক্ষতির কারণ। আসুন সবাই বরং নিজের চরকায় তেল দেই এবং সেটাই উত্তম বৈকি! যাতে করে হয়তো বোনা যাবে সুশ্রী-সুন্দর একটি আগামি এবং পরিচ্ছন্ন-শান্তিময় একটি পৃথিবী। Write to Khairul Islam Pakhi.