সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

অনৈক্যের আহবানে ফোবানা সম্মেলন শেষ

আগামী সম্মেলন জর্জিয়া মন্ট্রিয়েল ও নিউইয়র্কে

নিউইয়র্ক

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আগামী সম্মেলন জর্জিয়া মন্ট্রিয়েল ও নিউইয়র্কে

ছবি: সংগৃহীত

ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা-ফোবানা। ঐক্যের আহবানে বিভক্ত ফোবানা’র ৩৮তম সম্মেলন শেষ হলেও বিভক্তি রয়েই গেলো। নেতৃত্বের কোন্দলসহ নানা কারণে এবার চারভাগে বিভক্ত হয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের সম্মেলন। উত্তর আমেরিকার লেবার ডে উইকেন্ড ঘিরে নিউইয়র্ক ছাড়াও মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও মিশিগানের ডেট্রয়েটে পৃথক পৃথক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে নিউইয়র্কের সম্মেলন থেকে আগামী বছর (২০২৫ সাল) আবার নিউইয়র্কেই ৩৯তম সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ জানিয়েছেন।

মেরিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটাররি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম জানিয়েছেন, তাদের সম্মেলনে আগামী বছরের জন্য নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও মিশিগানের নাম প্রস্তাব এসেছে। তবে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ভার্জিনিয়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর জানিয়েছেন, তাদের সম্মেলন থেকে আগামী বছর (২০২৫) জর্জিয়ার আটলান্টায় এবং ২০২৬ সালের ৪০তম সম্মেলন ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আটলান্টা সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলা ধারা আর লস এঞ্জেলেস সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন থাকবে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়া। এই সম্মেলন থেকে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মাসুদ রব চৌধুরী এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি পদে পুন নির্বাচিত হয়েছেন আবীর আলমগীর। অপরদিকে মিশিগানের ডেট্রয়েটে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান জানিয়েছেন তাদের সম্মেলন থেকে আগামী বছরের সম্মেলন কানাডার মন্ট্রিয়েলকে দেয়া হয়েছে। এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে ক্যানাডিয়ান সলিডারিটি।  
এদিকে বিভক্ত ফোবানা সম্মেলনগুলোর অনুষ্ঠানমাল মধ্যে সেমিনার, কাব্য জলসা, ফ্যাশন শো, রকমারি স্টল প্রভৃতি থাকলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো দর্শক-শ্রোতাদের উপস্থিতি ছিলো বেশি। ফলে সম্মেলনগুলো ‘সাংস্কৃতিক সম্মেলনে’ পরিণত হয়। সম্মেলনগুলোতে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ, রিজিয়া পারভীন, বাদশা বুলবুল, দিনাত জাহান মুন্নী, ডলি সায়ন্তনী, আখি আলমগীর, বাউল কালা মিয়া, সুলতানা ইয়াসমীন লাইলা, বিপ্লব প্রমুখ। পাশাপাশি প্রবাসের নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের একক ও দ্বৈত নৃত্য দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। 
উত্তর আমেরিকার লেবার ডে উইকেন্ড ঘিরে নিউইয়র্ক ছাড়াও মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও মিশিগানের ডেট্রয়েটে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (৩০ আগষ্ট) থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনগুলোর কার্যক্রম চলে রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত। তবে তিনদিনব্যাপী ফোবানা সম্মেলনের কথা বলা হলেও মূল অনুষ্ঠানমালা হয় শনিবার ও রোববার। এদিকে ফোবানা বিভক্ত হওয়ার ফলে সম্মেলনগুলোতে প্রবাসীদের উপস্থিতি কম পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে বিভক্ত নয়, ফোবানাকে এক ছাতার তলে আনার জন্য সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশিরা দাবী জানিয়েছেন। সম্মেলনগুলোর আয়োজক সংগঠন ও কর্মকর্তারাও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কিভাবে ফোবানা ঐক্যবদ্ধ হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। 
সম্মেলনের শেষ দিন অর্থাৎ রোববার গভীর রাত পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের গান পরিবেশনের সময় দর্শক-শ্রোতারা নেচেগেয়ে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেন। পাশাপাশি প্রবাসের নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের একক ও দ্বৈত নৃত্য দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। অপরদিকে সম্মেলনগুলোর বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে প্ল্যাক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। আবার মূলধারার কোন কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধর পক্ষ থেকে সাইটেশন বা প্রোকলেমোশন প্রদান করা হয়। তবে সেমিনার, আলোচনা, কাব্য জলসা প্রভৃতি অনুষ্ঠানগুলোর চেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় দর্শক-শ্রোতার সংখ্যা ছিলো বেশ লক্ষনীয়। যদিও আয়োজকদের দাবী সম্মেলনগুলোতে তারা আশানরূপ দর্শক-শ্রোতার সাড়া পেয়েছেন। সচেতন প্রবাসীদের মতে ফোবানা সম্মেলন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নির্ভর হয়ে উঠেছে। 
এদিকে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া মেরিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেছেন, আমরা আশা করছি আগামী বছর আবার নিউইয়কেই ফোবানা সম্মেলন হবে। তাদের ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, আগামী বছরের নিউইয়র্কের সম্মেলনে অন্য ফোবানা যোগ দেবে এবং এই সম্মেলনের মধ্য দিয়েই ফোবানা ঐক্যবদ্ধ হবে। এজন্য তিনি সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান। 
নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলন:
নিউইয়র্কের ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ম্যারিয়ট নিউইয়র্ক লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট হোটেলে। এই সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এবিসিসিআই)। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। এতে চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, কনভেনর আসিফ বারী টুটুল, সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান প্রমুখ। শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওমেন জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডোনেবান, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার। এছাড়াও ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওমেন জেনিফার রাজ কুমারের পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ফোবানা কর্মকর্তাদের মাঝে সাইটেশন প্রদান করা হয়। এসময় বক্তারা ফোবানা সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। গিয়াস আহমেদ তার বক্তব্যে ফোবানা সম্মেলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রবাসে বাংলাদেশিদের ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সকল বাংলাদেশি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের অধিকার আদায় সহজ হবে।  
সেমিনার পর্বে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ডা. মাসুদুর রহমান। এছাড়াও ‘গণ অভ্যূত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ এবং করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক-লেখক সাঈদ তারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাংবাদিক রিমন ইসলাম। সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আখি আলমগীর ছাড়াও বাউল কালা মিয়া, চন্দন চৌধুরী, কৃষ্ণা তিথি, শশী, ত্রিনয়না হাসান, প্রেমা, নাজুয়া আকন্দ, লুমিন, অমিত, শিল্পী দম্পতি প্রমি-তাজ প্রমুখ।  
ম্যারিল্যান্ড ফোবানা সম্মেলন:
ম্যারিল্যান্ডের হোটেল হিলটন গেইটসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশি আমেরিকান ফাউন্ডেশন ইনক। এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ আর এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হচ্ছেন কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম। শনিবারের সাংস্কৃতিক পর্বে প্রবাসের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রানো নেওয়াজ ছাড়াও অনিক রাজ প্রমুখ শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। উল্লেখ্য, ফোবানা’র ইতিহাসে মেরিল্যান্ডে এবারই প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 
ভার্জিনিয়া ফোবানা সম্মেলন:
‘চেতনায় বাংলাদেশ’ গত শুক্রবার ৩০ আগস্ট থেকে ভার্জিনিয়া আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে শুরু হওয়া উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের বাংলাদেশিদের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত ফোবানা সম্মেলন শেষ হয় রোববার (১ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে। ভার্জিনিয়ার প্রাণকেন্দ্র আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে এবারের ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভয়েস অব আমেরিকার কিংবদন্তী সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী। সম্মেলনে যোগ দিতে গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি অঙ্গরাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো দর্শক সম্মেলন উপভোগ করেন। ফোবানার আয়োজকরা জানান, উত্তর আমেরিকার ৮৬টি সংগঠন এবারের সম্মেলনে অংশ নেন।
শুক্রবার সন্ধায় বাংলাদেশ, আমেরিকান ও কানাডার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ৩৮তম ফোবানার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের সুচনা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি) বান্টের শিল্পীরা বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার (তিন দেশের) জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এতে অংশ নেন অঙ্কিতা বড়–য়া, অবন্তী বড়–য়া, পিউলী ঘোষ, রাজদীপ ঘোষ, হোসেন ইসলাম, জয়নব ইসলাম ও আনন্দী বড়–য়া।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাংলাদেশিরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন। এজন্য তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকারদের ঐক্যের উপর গুরুত্বরোপ করে বলেন, প্রবাসে এমন সম্মেলন করে নতুন প্রজন্মদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহ দিতে হবে। তাহলেই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মত বাংলাদেশিরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রে নেতৃত্ব দেবেন। 
১৯৮৭ সালে কীভাবে ফোবানা’র প্রথম বাংলাদেশ সম্মেলন হয়েছিলো সেই ইতিহাস তুলে ধরে ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ঐ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পশ্চিমবঙ্গের বসবাসকারী মানুষরা এখানে বঙ্গ সম্মেলন করতো। সেই আইডিয়া থেকেই আমরা বেশ কয়েজন মিলে প্রথম বাংলাদেশ সম্মেলন শুরু করি। প্রথম সম্মেলন হয়েছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে। দ্বিতীয় সম্মেলন নিউইয়র্কে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ সম্মেলন হয়েছিল যথাক্রমে বোস্টন ও টেক্সাসে। এরপর হাঁটিহাঁটি পা পা করে আজ ফোবানার ৩৮তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। 
শামীম চৌধুরী ও আবীর আলমগীরের যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর ড. গাজালা এফ হাশমী, ভার্জিনিয়া স্টেটের একমাত্র বাংলাদেশি সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম, আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ডের সদস্য সুসান কুনিংহাম, রিজিওনাল ডাইরেক্টর তানিয়া ট্যালেন্টো, ইউএস সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, স্কটল্যান্ড থেকে আগত অতিথি স্কটিস পার্লালামেন্টের সদস্য ফয়সল চৌধুরী, ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, আহ্বায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি মাসুদ রব চৌধুরী, যুগ্ম এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি খালেদ রউফ, ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিফ প্রমুখ। ফোবানার’র এই অংশের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আবীর আলমগীর, সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, আহবায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন আশিম রানা, শিমা খান, তসলিম হাসান, দিনার মনি, উৎপল বড়–য়া, শিমুল ঘোষ, দিথি আনোয়ার, রেশমি মির্জা, তোশিবা, প্রিংবদা ব্যানার্জী ও আরজিন কামাল প্রমুখ শিল্পীরা। এছাড়াও শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে ‘ব্লাক টাই ডিনারে’ অংশ নেন অতিথিবৃন্দরা। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্বাগতিক সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)। 
শনিবারের অনুষ্ঠানে অংশ নেয় একাত্তর ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আমেরিকান আইটি প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (বাইটপো), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যানসাস, বিজ্ঞান মেলা শিশুদের স্বীকৃতি, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ পেনসিলভেনিয়া, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ গ্রেটার হ্যারিসবার্গ, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ মিসৌরি, আটলান্টা কালচারাল সোসাইটি, স্বাধীন বাংলা সাংস্কৃতিক সংগঠন (ভিএ), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ আমেরিকা ইনক (বাই), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ফিনিক্স (বিএপি), অপারাজেয় বাংলা (ভিএ), বর্ণমালা স্কুল প্রভৃতি সংগঠন। 
অনুষ্ঠানে রবি শঙ্করকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেতার বাজিয়ে শোনান সম্ব্রত রক্ষিত, তবলায় সঙ্গত করেন দেবী নায়ক। শেষে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রোমেল খান, মোমো, স্বপ্নীল সজিব, অনিমা ডি’কস্তা, বিউটি দাস ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ।
রোববারের অনুষ্ঠানে অংশ নেন- ইয়ুথ ট্যালেন্ট রিকগনিজেশন, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়া, সিংগিং স্টার পারফরম্যান্স, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ মিশিগান, বাংলাদেশ থিয়েটার অব হিউস্টন, বৃহত্তর শিকাগোর বাংলাদেশ কমিউনিটি, আটলান্টা (দুটি সংস্থা), ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি ইলা শোব এবং স্নেহা সোহা, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ গ্রেটার কানসাস সিটি, সুন্দরবন (ফেরদৌস ইকরাম), ড্রামা সার্কল ও বাংলা স্কুল (বিসিসিডিআই)। অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন ও অবদানের জন্য লতা মুঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান জেনিথ এশা সমাদ্দার কথা, তনুশ্রী দত্ত, তরুণ তারকা পারফরম্যান্স-পিউলী ঘোষ। রাতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আঁখি আলমগীর, মোজা ও জেফার। অনুষ্ঠানের মাঝে সমাজের বিশিষ্ট গুণী ব্যক্তিসহ পৃষ্টপোষোকদের হাতে পদক তুলে দেন ফোবানার কর্মকর্তাবৃন্দ।
তিন দিনের এবারের ফোবানা সম্মেলনে আরো ছিলো কারিগরি শিক্ষার প্রভাব ও উন্নয়ন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার সিকিউরিটি, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়ন, মূলধারায় নেতৃত্বের বিকাশ, আরবান ডেভেলপমেন্ট, ন্যানো টেকনোলজির এবং এর কার্যকারিতা, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এআই এর প্রভাব বিষয়ক বেশ কয়েকটি সেমিনার, সাহিত্য সভা, কাব্য জলসা, ফোবানা গ্রন্থমেলা, কারুপণ্য শিল্পের প্রদর্শনী, বর্ণীল ফ্যাশন শো। এছাড়াও ছিলো ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, তরুণ মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্কলাশিপ অ্যাওয়ার্ড, তরুণ প্রজন্মের অংগ্রহণে সঙ্গীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, ক্ষমতায়নে নারীর ভূমিকা, অর্জন এবং তাৎপর্য, যুব ফোরাম ও নেটওয়ার্কিং, এনআরবি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা উদ্যোক্তাদের, নেটওয়ার্কিং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এলামনাই ফোরাম নিয়ে আলোচনা, আন্তঃধর্মীয় শান্তি আলোচনা, বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী প্রভৃতি। সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহন ছিলো উল্লেখযোগ্য। 
ভার্জিনিয়ার ফোবানা থেকে সংগৃহীত অর্থ যাবে দেশের বানভাসীদের কাছে
এদিকে ভার্জিনিয়া ফোবানা সম্মেলন থেকে সংগৃহীত অর্থ পাঠানো হবে বাংলাদেশের বন্যা কবলিত এলাকায়। ইতোমধ্যে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের কর্মকর্তারা একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। সেখানে বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ আলমগীর ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী আবীর আলমগীর। তারা জানান, নির্বাহী কমিটির কর্তৃক সংগৃহীত অর্থের সঙ্গে যোগ করা হবে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন থেকে সংগৃহীত অর্থ। সম্মেলন থেকে প্রতিজন দর্শক-শ্রোতার প্রবেশ মূল্য থেকে ১ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২০ টাকা) হারে বন্যার্তদের জন্য সাহায্যের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাৎক্ষণিক সাহায্যের জন্য সম্মেলন স্থলের প্রবেশদ্বারে ও মঞ্চের পাশেও সাহায্যের জন্য বাক্স রাখা হয়। ফোবানা নেতৃবৃন্দ জানান, দেশের যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আমরা সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। 
মিশিগান ফোবানা সম্মেলন
অপরদিকে মিশিগান ষ্টেটের ডেট্রয়টের জায়নি ফিল্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব মিশিগান। এই সম্মেলনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী হচ্ছেন ড. রফিক খান।
শুক্রবার থেকে ফোবানা সম্মেলন শুরু হয় মিশিগানের ডেট্রয়েটে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় বাংলা টাউনখ্যাত ডেট্রয়েটের জেইন ফিল্ডে এবং হোটেল একোমডেশান, সেমিনার, ওয়ার্কশপ সাউথ ফিল্ড শহরের হিলটন গার্ডেনে। শনিবার ছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন, এদিন ছিল বিশেষ সেমিনার, ওয়ার্কশপ, আলোচনা সভা, বিজনেস নেটওয়ার্কিং সামিট, কাব্য জলসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন। 
এদিন ‘দেখা সাক্ষাৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রথম আলো ফাউন্ডেশনের প্রধান ইব্রাহীম চৌধুরীসহ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রথম আলো পরিবারের মাহবুব রহমান, ইশতিয়াক রুপু ও পার্থ সারথী দেব। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন আনোয়ারুল লাভলু। আরো বক্তব্য রাখেন ফোবানার চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারপারসন ও আউটস্ট্যান্ডিং মেম্বার বেদারুল ইসলাম বাবলা, ফোবানার এক্সিকিউটিভ জয়েন্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ কবির কিরণ, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং বাংলা প্রেসক্লাব অব মিশিগান ইউএসএ’র সভাপতি হেলাল উদ্দিন রানা সহ আরো অনেকে। 
অনুষ্ঠানে কবি মিলটন বড়ুয়া, সঙ্গীতা বড়ুয়া, হারান সেন, সঞ্জয় দেব, শফিক রহমান, মাহমুদুল হক লিটু, দেবাশীষ দাশ,  আব্দুল মালিক, রেজাউল করিম, সাইফুল আলম, আলী হাসান, এম ওয়াদুদ, মাসুক আহমেদ, কামরুল হুদা রাসেল, মো: আবদুর রৌফ, মো: আয়ুব আলী, সৈয়দ এন. সাকিল, সাবরিনা কবির, কাজী এম. হুদা, জাহিদ হোসেন, জিয়াউল হক জিয়া, ইকবাল কবির, সৈয়দ এম. ডি. আলী রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
 

শেয়ার করুন: