ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কের কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান রাজনীতিবিদ স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন তিনি মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস গঠন করে নতুন উদ্যোমে রাজনীতিতে অগ্রসর হয়েছেন।
চলতি বছরের ২৫ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেট প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন তিনি । এর আগে ৫ মে জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভার্সিটি প্লাজায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে কুইন্স কাউন্টি কমিটির সদস্য পদে তার প্রার্থীতা ঘোষণা করেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা।
পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেসের প্রেসিডেন্ট স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ জানিয়েছেন, তার এ অর্জন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের একটি আনুষ্ঠানিক অধ্যায় । তিনি বলেন, যারা এতদিন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অবদান রেখেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এখন দৃপ্তস্বরে , স্বগৌরবে বলতে পারবেন ডেমোক্রেটিক নিবার্চনে আমরাও মূলধারার নেতৃত্বে অংশীদার।
তিনি জানান, কুইন্স কাউন্টি কমিটির মেম্বার পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার জয়লাভের বিষয়টি একটা ইতিহাস ও একই সঙ্গে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এর কৃতিত্বের দাবিদার কমিউনিটির সকল মানুষ।
৫ নভেম্বর ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের দিন জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভার্সিটি প্লাজায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল গণনার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে তার জয়লাভের ঘোষণা দেন কুইন্সের জনপ্রিয় কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান। তিনি বলেন, আবু জাফর মাহমুদ শুধু বাংলাদেশের মানুষের কমিউনিটি নেতা নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়া তথা বৃহত্তর আমেরিকান কমিউনিটির জন্য এক অসাধারণ নেতৃত্বের সাক্ষর গড়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধা এবং বাংলাদেশি আমেরিকান সম্প্রদায়ের অন্যতম স্তম্ভ আবু জাফর মাহমুদের জীবনদর্শন ও কর্ম বাংলাদেশি আমেরিকান তথা বৃহত্তর আমেরিকান সমাজের জন্য অভূতপূর্ব প্রভাব ফেলেছে।
১৯৪৮ সালের এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরের তীরে জন্ম নেওয়া আবু জাফর মাহমুদ নিউ ইয়র্কে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ। তিনি বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এবং অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার ইনকর্পোরেটেড এর প্রেসিডেন্ট এবং সিইও। তিনি নিউইয়র্ক রাজ্যে হোম কেয়ার শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, অসংখ্য প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধীদের উচ্চমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নত করেছেন। পেশাগত সাফল্যের বাইরেও তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি এবং অন্যান্য অভিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় এক অবিচল সংগ্রামী।
আবু জাফর মাহমুদ মহান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দেশের দলীয় রাজনীতির পথ পরিহার করে রাজনীতিচর্চা ও মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। একই সঙ্গে তিনি মনোনিবেশ করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সমরনীতি বিষয়ক গবেষণায়।
নিউইয়র্কে ৩২ বছর বসবাসকালীন সময়ে তাঁর সাহায্যের হাত পৌঁছে গেছে প্রবাসী বাংলাদেশি থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দূর্যোগ কবলিত দেশের জনগোষ্ঠীর মাঝে। সহায়তা পাঠিয়েছেন আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক এবং ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাইতির মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক শহরে কোভিড-১৯ মহামারির সময় আবু জাফর মাহমুদেরমানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ প্রচেষ্টা ছিল অসাধারণ। মহামারি চলাকালীন, তিনি ও তাঁর সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে, যা তাঁর অবিচল মানবিকতার প্রতিচ্ছবি।
প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর অবদান শুধু মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি 'পিপল ইউনাইটেড ফর প্রগ্রেস' এর নেতৃত্বে থেকে সংখ্যালঘু অভিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে, এই সংস্থা বাংলাদেশি আমেরিকানদের শুধু আমেরিকার সমাজে একীভূত করা নয় বরং তাদেরকে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী করে তুলেছে। ভোটার নিবন্ধন ক্যাম্পেইন, নীতি পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা, এবং বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা—এসবের মাধ্যমে মাহমুদ প্রমাণ করেছেন যে প্রবাসীদের অধিকারের জন্য তিনি নিবেদিত।
এই অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে, মাহমুদ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নাইট অফ সেন্ট জন অফ জেরুজালেম, প্রেসিডেন্টস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং প্রেসিডেন্টস ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড ও পদবী। তিনি জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট থাউজেন্ড শেডস অফ উইমেন কতৃর্ক গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর নিযুক্ত হন। এছাড়া মানবসেবায় অবদানের জন্য তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট অর্জন করেছেন।
রাজনীতি ছাড়াও, আবু জাফর মাহমুদের প্রভাব সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী। জয় বাংলাদেশ মিডিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে তিনি টেলিভিশন এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর সম্পাদিত মাসিক প্রকাশনা "দ্য বে ওয়েভ" আমিরকার মূল ধারার রাজনীতি ও জনজীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। পত্রিকাটি বৃহত্তর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক বিষয় তুলে ধরা হয়। আবু জাফর মাহমুদের প্রবন্ধ সংকলন ‘জয় বাংলা, ‘জয় বাংলাদেশ’ এ গর্ব এবং একতার এক নতুন বর্ণনা উপস্থাপন করে, যা দেশের ধ্রুবক রাজনৈতিক বিভাজনের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে।
মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি এমন একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছেন যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকানদের অবদান উপস্থাপিত হয় এবং বৃহত্তর আমেরিকান জনসাধারণ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।