বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

খাইরুল ইসলাম পাখি’র কিচিরমিচির বত্রিশ

আমরা কি মিথ্যুক, যে মিথ্যা মিথ্যা  খেলি?!

খাইরুল ইসলাম পাখি

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আমরা কি মিথ্যুক, যে মিথ্যা মিথ্যা  খেলি?!

ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় মিথ্যা বললে শাস্তি পেতে হতো। বাবা-মা কিংবা শিক্ষক কেউ ছাড় দিত না। তাই মিথ্যা বলায় প্রচন্ড ভয় ছিল। বড়রাও ভয় পেত, যদি মিথ্যা বলে মিথ্যুক তকমা পেয়ে যায়। লোকে মিথ্যুক বলবে এ কেমন কথা? তবে সে সত্তর আশির দশকে যে মিথ্যা কেউ বলতো না তা বলছি না। তবে আজিকার মত বুক ফুলিয়ে মিথ্যা বলার প্রবণতার এই হার, তখন ছিল না! কথায় আছে- মিথ্যা বলতে পয়সা লাগে না। আমরা যেনো এ কথার সদ্ব্যবহার করতে ছাড়ছি না।

নিজের চরিত্র, সমাজ, দেশ গোল্লায় যাক। তাতে কি বা আসে যায়। আমি পার পেলেই হল। মিথ্যা বলে যদি নিজের লাভ হয় আর অন্যের ক্ষতি হয় এর চেয়ে আনন্দের তো কিছুই নেই! আজ এমনিতর দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত কমবেশি সবাই। এই ব্যাধি যদি না সারে তবে জাতি হিসেবে যে কারো মৃত্যু অনিবার্য। এই সহজ সত্যটা কেউ যেন মানছি না। এই না মানার কাতারে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, উকিল, মোক্তার আমলা আর কামলা কেউ বাকি নেই। মিথ্যার এই মহামারী একদিনে বা কোনো একজনের জন্য ছড়ায়নি। মোটামুটিভাবে আমরা সবাই এই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছি। বহু বছর ধরেই চলছে সত্যকে মিথ্যা বলার এই হীন চর্চা। মিথ্যা রাজনীতি, মানুষকে ধোঁকায় ফেলে শোষণের কুটকৌশলের পরিণতিই যেনো আজ আমরা ভোগ করছি। 
সোশ্যাল মিডিয়াম আর অন্যান্য মিডিয়ামে মিথ্যা ও অপপ্রচারের প্রতিযোগিতা চলছে দেদারসে! এই সম্প্রতি কালে ফেসবুক আর সোশ্যাল মিডিয়াম গুলোতে যদি তাকাই তবে দেখব, পাল্লা দিয়ে গুজব আর রঙচঙে রটনা চলছে, এই পক্ষ আর ওই পক্ষের। কেউ কারো চেয়ে কম যাচ্ছে না। তিলকে তাল করে, রাতকে দিন করে মিথ্যার শিলাবৃষ্টি চলছে। মিথ্যার আগুনে পুড়ছে সমাজ, দেশ। তবুও কারো গায়ে যেন আঁচ লাগছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে মিথ্যার আগুনেই আমাদের মৃত্যু হবে, ছাই হতে হবে একদিন। 
তাই নিজেদের বাঁচাতে হলে মিথ্যাকে ‘না‘ বলা বা দূরে ঠেলার চর্চা এই মুহূর্তে শুরু করতে হবে। মিথ্যা কথা বা মিথ্যা ছড়ানোর আগে চিন্তা করুন নিজের সন্তানের কথা। আপনারই ছড়ানো বিষবাষ্পে ওরাও দূষিত হচ্ছে। ওদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে এভাবে চললে। আমাদের এমন ধ্বংস দেখে অন্যরাও হাসবে। অবজ্ঞা করবে। আমাদের বাঁচাতে কেউ আগ্রহী হবে না। যে জাতি তার নিজের ভালো চায় না, সে জাতিকে রক্ষা করবে কে? স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও মুখ ফিরিয়ে নেবে।বোধ করি কোন ধর্মেই মিথ্যা বলতে বলে না। অথচ আমরা ধর্মের নামে সত্যকে বলি দিচ্ছি যখন তখন। এসব ধ্বংস খেলা ছেড়ে আসুন প্রথমেই আত্মশোধনে ব্রত হই। নিজের ভেতরটা আগে শুদ্ধ করি, সংস্কার করি। মিথ্যা বলা বা মিথ্যা ছড়ানো পরিহার করি। এটা বিশ্বাস করি যে, মিথ্যা বলা অন্যায়, ক্ষতিকর, পাপ, বিপদজনক। প্রতিজ্ঞা করি এই মুহূর্ত থেকে সত্য বলার। দিনটা শুরু করি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সেই বিখ্যাত কথা দিয়ে- সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।
 

শেয়ার করুন: