ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিবাদ করে লাভের লাভ কিছু হয় কি? এটা বাড়ির পাশে বাড়ি বা ঘরের পাশে ঘর না, যে উঠিয়ে নিয়ে কিংবা বেঁচে দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া যায়। দেশের সাথে দেশ বলে কথা। তাই এখানে বিশদভাবে ভাবনার অবকাশ আছে। শুধুমাত্র অস্থিরতা বাড়ালে চলবে না। ভারত আমাদের তিন দিক দিয়েই এমন করে আলিঙ্গন করে আছে, যেখানে প্রেম না থাকলেও আমাদের যেন তার সাথেই ঘর করতে হয়!
ভারত বড় বলে বড় ভাই সুলভ আচরনতো হামেশাই করে। যা আমাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করে বৈকি! গোটা বিশ্বে বড় বা শক্তিশালী দেশগুলো তার প্রতিবেশীর সাথে একই ধরনের আচরণ করে। এটা যেন এক অঘোষিত নিয়ম। সমস্ত প্রাণীকুলের এটাই আচরণ। জোর যার মুল্লুক তার। এজন্যই আপনি ছোট বলে আপনাকে চাপ নিতেই হয়।
কিন্তু এই চাপ কিংবা আগ্রাসন থেকে মুক্তির উপায় কি? উপায় একটাই নিজেদের শিক্ষা, বুদ্ধিমত্তা এবং অপরিহার্যতা বাড়াতে হবে। আগুনে ঘি ঢেলে কোন লাভ নেই, এগুলো মূর্খ আর অপদার্থের কাজ। আর এই মূর্খদের মূর্খামির জন্য গোটা জাতিকে ভুগতে হয়। অন্য দেশের মানচিত্র বা পতাকার অবমাননা করা কোন্ ধরনের কুশিক্ষা আমার বোধে আসে না। অন্য বাড়ীর কুকুর ঘেউ করে উঠলে আমরাও ঘেউ ঘেউ করে উঠবো? অন্যরা ইট মারলে আমরাও ইট মারব? এসব করে ঝামেলাই তো বাড়ে বরং শিক্ষিত হই, বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা বাড়বে। আর তা দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে যে কোন অপচেস্টার। সেটা ভারতই হোক আর যেই হোক।
আর ধর্মকে বর্ম করে হট্টগোল পাকাচ্ছে যারা তারা তো ধর্মান্ধ উন্মাদ। এমন গুটিকয়েক পাগলের উন্মাদনা কোন শান্তি বয়ে আনছেও না, কোন কালে আনেও নি। এই অন্ধ প্রতিক্রিয়াশীলরা দুপাশেই আগুন ছড়াচ্ছে। আর আগুনে ঘি ও ঢালছে এরাই। এসব সাধারনের কাজ না।
ধর্মের উগ্রতা কি ভয়ঙ্কর হয় আর ধ্বংস আনে, মধ্যপ্রাচ্যে তাকালেই তা স্পষ্ট।
ঐ ধরনের মর্মান্তিক বাস্তবতায় আমরাও নিমিষে পৌঁছে যাব, ধর্মের নামে উগ্রতা ছড়াই যদি। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা বিগত সরকার গুলোর আচরণ দেখুন, কারোরই কোন বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ ছিল না, এই বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে। কেউ নতজানু হয়েছেন, কেউ হয়েছেন ভারতবিদ্বেষী। দু'টো আচরণই অস্বাভাবিক ও বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। যা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। এসব ছেড়ে আমাদের মধ্যপন্থা ধরে হাঁটতে হবে এবং মর্যাদাপূর্ণ কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে হবে। ওইসব বয়কট মার্কা ঘেউঘেউ আর এই কারেঙ্গা সেই কারেঙ্গা এসব করে শান্তি আসে না। নিজের চাল চুলো আগে ঠিক করে অন্যের কাছে বাহাদুরি ফলানো উচিত।
ভারতের ধর্মান্ধরা যে তান্ডব বা খিস্তি করছে সেটা যেমন অনৈতিক বা অনুচিত, পাল্টাপাল্টি হিসেবে আমাদের গুটিকয় উগ্রপন্থী ও মৌলবাদীরা যা করছেন সেটাও অনৈতিক। মানুষকে হিন্দু মুসলিম দিয়ে বা ধর্ম দিয়ে বিচার করা ছাড়তে হবে এবং সবাইকে ভাবতে হবে মানুষ। অন্যদিকে ধর্মের নামে যারা আগুন আগুন খেলছে, সেটা যেই হোক ওরাই বরং অমানুষ ও অসভ্য। এই অসভ্যতা থেকে না বেরোলে শান্তি আসবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্ট করার আগে ভেবে চিন্তে করুন। যেটা ভালো হয় বা শান্তি বয়ে আনে সেদিকে দৃষ্টি দিলে আমাদের সবার জন্য মঙ্গলময় হবে। আর যারা বিষ বাষ্প ছড়ায় এদের চিহ্নিত করে আসুন এদেরই বরং বয়কট করি বা মুখ বন্ধ করি। আর বিদ্বেষ ভুলে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহনশীলতা ও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করি।
বর্তমানের পবিত্র ও শিশু সরকারকে দু‘দেশের কূটনৈতিক বিষয়ে অধিকতর কুশলী ও কার্যকরী ভূমিকা নেয়ার অনুরোধ রাখছি।
লেখক: অভিনেতা।