ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্কে ১৬ ডিসেম্বর যথাযথ মর্যাদায় ও উৎসাহ উদ্দীপনায় বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ১৯৭১ সাল ও ২০২৪’-এর জুলাই-আগস্টে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার বাণী পড়া হয়। অনুষ্ঠানে ‘গণমুক্তি অনিবার্য’ শীর্ষক প্রামাণ্য ভিডিও দেখানো হয়।অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং বীরাঙ্গনা, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সব স্তরের নেতা-কর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিক সচেষ্ট থাকতে হবে।’
নাজমুল হুদা বলেন, ‘২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সংযোজন করেছে। ২০২৪ সালের ফ্যসিবাদ বিরোধী ও বৈষম্য বিরোধী গণ-অভ্যুথান বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা মেরামত তথা সংস্কারের এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’তিনি জুলাই আগষ্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং যারা এই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন, তাদের আশু সুস্থ্যতা কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার যে সংস্কার কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য নাজমুল হুদা সকলের ঐকান্তিক সহযোগীতা কামনা করেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে বাসবাসরত প্রবাসী ভাই-বোনদের অধিক অবদান রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেনন এবং বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ৭১’-এর শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২৪’-এর জুলাই-আগষ্টে গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। কমিউনিটির শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন
নিউইয়র্ক : যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্কে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস-২০২৪ উদযাপন করা হয়েছে। প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রবাসী বাংলাদেশীরা এতে অংশ নেন।জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গকারী বীর শহীদগণ ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বীর শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নিরবতা পালন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পড়া হয়। এরপর অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত ‘গণমূক্তি অনিবার্য’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশীরা। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে একযোগে কাজ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
পাশাপাশি, জুলাই-আগস্ট অভ্যুথানের মাধ্যমে যে বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন।সমাপনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সব বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমাদের সূর্যসন্তানরা দেখেছিলেন, যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা অমূল্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, তা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সামঞ্জস্য বর্ণনা করে আব্দুল মুহিত বলেন, ‘রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নির্মূলের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বপ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সেই একই প্রেরণায় ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।’
তিনি গণঅভ্যুথানের উত্তাল সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমর্থন এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা গণঅভ্যুত্থানকে বেগবান করতে তাদের অবদান স্বরণ করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আব্দুল মুহিত গণঅভ্যুথানের চেতনায় অদম্য বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সব প্রবাসী বাংলাদেশীকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। নানা ধরনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে অর্ন্তর্বতী সরকার সাফল্য দেখিয়েছে।’ এ বিষয়ে তিনি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। এই মুহুর্তে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবেলায় সকলের একতাবদ্ধ থাকার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।