ছবি - নবযুগ
বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস। তিনি বলেছেন, ভালো জায়গা খুঁজুন, যেখানে বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো। গত ১৬ ডিসেম্বর, সোমবার রাতে নিউইয়র্কে প্রবাসীদের আমব্রেলা সংগঠন হিসাবেখ্যাত বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের অভিষেক ও বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এ আশ্বাস দেন মেয়র অ্যাডামস।
উডসাইডে তিব্বতিয়ান কমিউনিটি সেন্টারে বিশাল হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন। তবে অভিষেক অনুষ্ঠান ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায়। অনুষ্ঠানস্থল ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি এবং চিৎকার-চেচামেচির ঘটনা ঘটে।
অভিষেক অনুষ্ঠানে মেয়র এরিক অ্যাডামস ছাড়াও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা, মূলধারার জনপ্রতিনিধি ও নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার, নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস সিনেটরের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি অনেক সমৃদ্ধ। সিটি প্রশাসনে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে একজন বাংলাদেশিকে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশিদের সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি। তিনি বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে শুভেচ্ছা জানান এবং সবসময় এই কমিউনিটির পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পবিত্র গীতা পাঠ করেন বিদায়ী কমিটির কার্যকরী সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এক মিনিট নিরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের প্রতি।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ রব মিয়া। বিদায়ী কমিটির ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক এবং অভিষেক ও বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মইনুল উদ্দিন মাহবুবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান মঞ্চে অতিথি হিসাবে ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. আজিজ, সাবেক সভাপতি আকতার হোসেন, সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আজহারুল হক মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকী, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি (পুনঃনির্বাচিত) এবং অভিষেক ও বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান, বিদায়ী সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী, বিদায়ী কার্যকরী সদস্য এবং অভিষেক ও বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ফারহানা চৌধুরী এবং প্রধান নিবার্চন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি।
এই পর্বে বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন সংক্ষিপ্ত আকারে আয়-ব্যয়ের একটি আর্থিক প্রতিবেদন পড়ে শোনান।
অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে ছিল নবনির্বাচিত কমিটির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। এ পর্ব পরিচালনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি। এসময় নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আব্দুল হাকিম মিয়া, হেলাল উদ্দিন, আহবাব চৌধুরী খোকন উপস্থিত ছিলেন। নবনির্বাচিতদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি।
অভিষিক্তরা হলেন- সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কামরুল, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, প্রচার ও গণসংযোগ সম্পাদক (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) রিজু মোহাম্মদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী, সাহিত্য সম্পাদক আকতার বাবুল, ক্রীড়া সম্পাদক আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক হাসান জিলানী এবং নির্বাহী সদস্য সিদ্দিক পাটোয়ারি, হারুন চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, মনসুর আহমেদ এবং হাসান খান।
তৃতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন নতুন সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। নতুন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় এ পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মেয়র এরিক অ্যাডামস। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার, মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার, নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ইউএস সিনেটরের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মেয়র অ্যাডামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে মেয়র বাংলাদেশ সোসাইটিকে একটি সাইটেশন প্রদান করেন। এরপর নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা মেয়রের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব। এই পর্ব পরিচালনা করেন নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সঙ্গীতশিল্পী অনিক রাজ। এতে নিউইয়র্কের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অভিষেক ও বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘প্রত্যাশা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। এটি সম্পাদনা করেছেন বিদায়ী কমিটির সাহিত্য সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ। ব্যবস্থাপক সম্পাদক ছিলেন প্রচার ও গণসংযোগ সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ। সহ-সম্পাদক ছিলেন নতুন কমিটির সাহিত্য সম্পাদক মো. আকতার বাবুল।
অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে নতুন কমিটির আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। আলোচনায় বিজয় দিবসের তাৎপর্যসহ সাংগঠনিক আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য মঞ্চে উপবিষ্ট সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলমকে অনুষ্ঠান সঞ্চালক অনুরোধ করলে প্রথমে তিনি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। পুনরায় বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করা হলে বক্তব্যের প্রারম্ভেই বলেন, মহিউদ্দিনের জ্বালাময়ী বক্তব্যের পর আর বলার কিছুই থাকে না। ফখরুল আলম বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলতে থাকেন বিজয় দিবসে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমরা ৩ বার বিজয় অর্জন করেছি ৩ রকমের। তিনি বলেন, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদেরকে সেবা দাসের একটি গোষ্ঠিতে পরিণত করা হয়েছিলো। সেখান থেকেই বিজয় লাভ করেছি। ফখরুল আলম বলেন, অতীতে যারা লুন্টন করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, গুম হত্যা করেছে, দেশে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই বিজয়। এই সময় হলের বাম কোণ থেকে গোলাম মর্তুজা ভুয়া, ভুয়া বলে মন্তব্য করতে থাকেন। তার সাথে আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ভুয়া ভুয়া বলতে থাকেন, প্রতিবাদ করতে থাকেন। চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। প্রতিবাদকারীরা মঞ্চের দিকে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যায়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি- হাতাহাতি। অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাইক নিয়ে অনেকেই পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন, ক্ষমাও প্রার্থণা করেন। মুহূর্তের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিষাদময় হয়ে উঠে। নব নির্বাচিত সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমসহ আয়োজকরা অনুরোধ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে মেয়র এরিক অ্যাডামস আসার খবরে সবাই আস্তে আস্তে হয়ে যায়।