ছবি: সংগৃহীত
(শেষাংশ) উন্নত বিশ্বে কৃষকদের মূল্যায়ন করা হয় যথার্থ ভাবে। তারা সব শ্রেণী পেশার মানুষদের কথা চিন্তা করে সমাজ সাজায়। তাই সেসব দেশে নানা পেশার মানুষের মাঝে এবং জীবন যাপনে ভারসাম্য বজায় থাকে। সেখানে স্ব স্ব পেশার প্রতি প্রত্যেকে সম্মান দেখায়। অন্যদিকে অন্যদের পেশাকেও তারা একইভাবে সম্মান করে।
আমাদের দেশে আমরা বলি ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে‘। কিন্তু কৃষককেতো বাঁচাতে হবে। শুধু সুন্দর সুন্দর কথা বলে কোন লাভ নেই, যদি না কার্যত তাদের জন্য কিছু করা হয়। সেদিন এক হতবুদ্ধি সম্পন্ন উপদেষ্টা বললো, চালের দাম আর কমানো যাবে না, তাহলে কৃষক ন্যায্য দাম পাবে না। খুব ভালো কথা। কিন্তু চড়া দামে চাল কিনতেওতো সবাই পারছে না। এই সমস্যার খুবই সহজ সমাধান হলো, কৃষককে ভর্তুকি দিন। কৃষি সামগ্রীর দাম কমান। তাদের সহজে বা কম সুদে লোন দিন। সুলভে বা ফ্রিতে বীজ দিন। সর্বোপরি তাদের সম্মান দিয়ে পাশে দাঁড়ান, দেখবেন মাটির মতো ভালোবাসা দিয়ে তাঁরা আমাদের ফুলে ফসলে ভরিয়ে দেবে। কৃষককে হাঁসি খুশি রাখুন, তবেই হাসবে দেশ।
১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কৃষাণ কৃষানীর অবদানের কথা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া আমাদের সহসা মুক্তি আসত না। শহুরে বাবুদের চেয়ে তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। শুধু তাই নয় শহুরে বাবুদের সেদিন কৃষক তার ছনের ঘরে আশ্রয় দিয়েছিল। কৃষক বধূ তাদের পাতে দিয়েছিল গরম ভাত।
এই কৃষককেই যখন কেউ অবজ্ঞা করে কথা বলে, তাঁর সাথে যখন কেউ অন্যায় আচরণ করে, তখন আমার কবি হেলাল হাফিজের ভাষায় তাদের বলতে ইচ্ছা করে- ‘আমিও গ্রামের পোলা চুতমারানি গাল দিতে জানি‘। হায় একজন কৃষক যখন তার সর্বস্ব উজাড় করে আমাদের মুখে খাবার তুলে দেয়, আমরা কোন মুখে তাঁদের নিচু বা হেয় করি!
কৃষকের সন্তান বলতে, কৃষকের বংশধর বলতে এত লজ্জা বা দ্বিধা কিসের? কেন আমরা চেপে যাই সত্য ভাষণে? সত্য তো চাপা থাকে না। আমরা নিজেরা তো জানি সত্যটা। তাই নিজেরা যদি মিথ্যা ভান না করে সত্যকে ধারন করি তখন সত্য বলতে কারো বুক কাঁপবে না। তখন নির্দ্বিধায় বলতে পারবো সবাই, আমরা কৃষকের জাত।
আমি এবার আমার কথা বলি। আমাকে ছোটবেলায় অন্য সবার মতই বড় বড় স্বপ্ন দেখিয়ে পড়াশোনা করানো হয়েছে। সেসব স্বপ্নের কথায়, কৃষক হতে কখনো বলা হয়নি। আমার দাদা, বড় দাদার জমি ছিল বেশ। কৃষক ছিলেন তাঁরা। কিন্তু আমার বাবা পড়াশোনা করে সরকারি চাকুরে হয়েছিলেন, গঞ্জে গিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাকেও আরও দূর গঞ্জে পাঠানোই ছিল তাঁদের স্বপ্ন। তাঁদের স্বপ্নকে আমি খাঁটো করে দেখছি না। ঘরে বা বাইরে কেউ যে আমাকে কৃষক হতে বলত না, সে কথাও ধরছি না। কিন্তু কেউ যদি অন্তত বলত, লেখাপড়া শিখে তোমার যা ইচ্ছা তাই হতে পারো, এমনকি কৃষকও হতে পারো। তবে সেই বিষয়টা হয়তো আমার বেশি মনপূত হত।
এখন মাঝে মধ্যে মনে হয়, যদি আরেকবার জন্মাতাম! তবে কৃষকই হতাম। এই পেশাটাই সবচেয়ে সৃষ্টিশীল, মানবিক আর মহান বলে মনে হয়। যেন কৃষকগনই নতুন নতুন সৃষ্টি করে করে মানব সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখছে। তাই আমার কখনো নবজন্ম হলে, আমি পুনরায় কৃষি আর কৃষকের ঘ্রাণই শরীরে মাখতে চাই। হে মহান কৃষক, তোমাদের প্রতি আমার সমস্ত সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
লেখক: অভিনেতা।