
প্রতীকী ছবি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে গণগ্রেফতার আর ডিপোর্টেশন। এই কর্মসূচি ঘিরে বাংলাদেশিসহ সকল দেশের অভিবাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সূত্র মতে, প্রায় দেড় মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী (আন ডকুমেন্টেড)-কে গণ-ডিপোর্টেশনের জন্য চূড়ান্ত করেছে ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস। এই তালিকায় রয়েছেন ৪,৮৩৭ জন বাংলাদেশি। আইস’র তালিকায় সর্বাধিক অভিবাসী রয়েছেন হন্ডুরাসের।
ইউএস ইমিগ্রেশন আদালত প্রকাশিত তথ্য মতে নিউইয়র্কে আড়াই লাখের বেশি অভিবাসীর বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন অর্ডার (বহিষ্কারাদেশ) রয়েছে। এ সংখ্যা ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৮০ জন। বিগত ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নিউইয়র্ক স্টেটের ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৮০ জন অভিবাসন প্রত্যাশী ও আনডকুমেন্টেডকে এ ডিপোর্টেশন অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এদিকে চূড়ান্ত ডিপোর্টেশন আদেশ প্রাপ্তরা আইসের প্রাথমিক টার্গেট হলেও অভিযান চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে যে কোন ধরনের ইমিগ্রেশন আইন ভঙ্গকারী কিংবা অভিবাসন প্রত্যাশীরা ইমিগ্রেশন এন্ড কাষ্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টদের অভিযানে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখিন হতে পারেন। এ সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আইস’র তালিকায় সর্বমোট ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৯ জনকে গণ-ডিপোর্টেশনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ডিপোর্টেশন অর্ডার পাওয়া এবং আনডকুমেন্টেড হিসেবে থাকা অভিবাসীদের তথ্য অনুযায়ী এ তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকার মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন ৪,৮৩৭ জন। ডিপোর্টেশনের তালিকায় সবচেয়ে বেশি রয়েছে হন্ডুরাসের ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৫১ জন। এরপর তালিকায় রয়েছেন গুয়েতেমালার ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৩ জন, মেক্সিকোর ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৪জন, এল সালভাদরের ২ লাখ ৩ হাজার ৮২২ন জন, দক্ষিণ এশিয়ার ডিপোর্টেশনের তালিকায় সবচেয়ে বেশি রয়েছে ভারতের ১৭ হাজার ৯৪০ জন, পাকিস্তানের ৭৭৬০ জন, শ্রীলংকার ৩০৬৫ জন, আফগানিস্তানের ১৭০৮জন, নেপালের ১৩৬৫জন এবং ভূটানের ১২২জন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই জোরেশোরে চলছে অবৈধ অভিবাসীদের গণ-ডিপোর্টেশন কার্যক্রম। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যাণ্ড সিকিউরিটির তত্ত্বাবধানে আইস’র নেতৃত্বে এফবিআই, এটিএফ, ডিইএ এর ২৫টি ফিল্ড অফিসের মাধ্যমে চলছে এই কার্যক্রম।
আইস’র অভিযানে নিউইয়র্কে প্রথম আটকের শিকার হন সাব্বির আহমদ নামের এক বাংলাদেশি যুবক। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে জ্যাকসন হাইটসের একটি বাসা থেকে ভোর ৬টার দিকে গ্রেফতার করে পেনসেলভিনিয়ায় আইসের ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ যুবকের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি সে ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো-টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন সাব্বির। সে তার বড় ভাইয়ের সাথে বসবাস করছিলেন।
অপরদিকে সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি রোববার ভোরে মোহাম্মদ শামীম (৪০) নামে আরেক বাংলাদেশিকে পেনসিলভেনিয়ার রুজভেল্ট এলাকা থেকে আইস গ্রেফতার করে। জানা গেছে, মোহাম্মদ শামীমকে আইস আটকের পর দুপুরে আইস’র আটক কেন্দ্রে নেয়া হয়। সেখান থেকে শামীম স্বজনদের ফোন করে জানান যে, আইস কর্মকর্তা জানিয়েছেন তার জন্য এটর্নীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করতে হবে। মোহাম্মদ শামীম ৫ মাস আগে মেক্সিকো-টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ এবং রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। তবে তার ওয়ার্কপারমিট ও সোশ্যাল সিকিউরিটি ছিলো না। আইডি না থাকায় তাকে আটক করে নিয়ে যায় আইস কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সোসাইটির সহযোগিতার আশ্বাস: এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের গণ-ডিপোর্টেশন কর্মসূচিতে কোন প্রবাসী বাংলাদেশি সমস্যার মুখোমুখী হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘আমব্রেলা সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে সভাপতি মোহাম্মদ আতাউর রহমান সেলিম সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ও আমেরিকান আইনজ্ঞ নিয়ে সেমিনার আয়োজন করে সংশ্লিস্টদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান।