শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

খাইরুল ইসলাম পাখি’র কিচিরমিচির-চল্লিশ

চিলে কান নিয়েছে বলে না বুঝেই দৌড়াচ্ছেন?

খাইরুল ইসলাম পাখি

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ১১ এপ্রিল ২০২৫

চিলে কান নিয়েছে বলে না বুঝেই দৌড়াচ্ছেন?

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের সমাজে গুজবের ছড়াছড়ি আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চব্বিশ এর পট পরিবর্তনের পর গুজব গুজব খেলায় মত্ত গোটা দেশ। কিছু দুষ্কৃতিকারী অত্যন্ত সুকৌশলে এইসব অপকর্ম করে চলেছে। এদের কুট কৌশলের জালে পড়ে অনেকেই জেনে এবং না জেনে গুজবে কান দিয়ে সেসব ছড়িয়ে দিচ্ছেন সর্বত্র! সাধারণ মানুষ অবুঝের মত গিলছে সেসব বর্জ্য। কোনটা যে মিথ্যা আর কোনটা যে সত্য তা মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে! অগ্র পশ্চাৎ না ভেবেই অনেকে অনেক মিথ্যাকে সত্য ভাবতে শুরু করে দেন। এসব কারণে বিপদসংকুল হচ্ছে মানুষ ও সমাজ। বাড়ছে সন্ত্রাস। মন অস্থির হয়ে হয়ে মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

এই যে এত সব গুজব আকাশে বাতাসে, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে, তা কেন এমন মহামারীর রূপ নিল? এই প্রশ্নটা আমরা সবাই যদি নিজেকে করি, তবেই বহু উত্তর খুঁজে পাবো এবং দেখব এ অবস্থার জন্য আমরা সবাই কমবেশি দায়ী। একজন বলল সংসদ ভবনের সামনে রাস্তায় বা টাইম স্কয়ারে সাত’শো হাত লম্বা একটা অজগর শুয়ে আছে, আমি এটা শুনেই কেন বিশ্বাস করবো? এতো অসত্য, মিথ্যা। শুধু বিশ্বাস করেই ক্ষান্ত হচ্ছি না, অনেকে বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই এই সব অসত্য অন্যদের পৌঁছে দিতে ব্যস্ত ও মরিয়া হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বুদ্ধি কি এতটাই নি¤œগামী, যে ভাবছিই না- এত বড় অজগর হয় কি? মানুষ জীবিত একজনকে মৃত বলতেও দ্বিধা করছে না!
কেউ এসে বলল আপনার আদর্শ শিক্ষক গতরাতে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে! আর অমনি শোনা কথা কানে নিয়ে তাকে গুষ্টি উদ্ধার শুরু করবেন? জুতোর মালা পরিয়ে দেবেন? নাকি এটা সত্য নাকি মিথ্যা তা একটু ভাববেন? বা খতিয়ে দেখবেন? কেউ কিছু বানিয়ে বললেই সে মিথ্যা তথ্য আপনি নির্দ্বিধায় গিলে খাবেন?
বর্তমান রাজনৈতিক ডামাডোলে সকল পক্ষ যেভাবে কাছা মেরে একে অন্যের বিরুদ্ধে বানোয়াট, অসত্য, মনগড়া, ভিত্তিহীন গুজব ছড়াচ্ছে, তাতো রীতিমতো কদর্য। একটু বুদ্ধি খাটালেই অন্তত বোঝা যায় এসবের সিংহভাগই হল ইচ্ছাকৃতভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো। আর এসব উচ্ছিষ্ট ছড়াতে আমরা অনেকেই জড়িয়ে পড়ি অগ্রপ্রশ্চাত না ভেবেই। তা না করে, যদি আমরা যে যার জায়গা থেকে সচেতন হই, তবে অসৎ উদ্দেশ্যে যারা এসব করে ফায়দা লুটছে তারাও নিরুৎসাহিত হতো।
আপনার আমার অসাবধানতায় কিন্তু এসব কুচক্রীমহল সমাজ দূষিত করার পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়াম থেকেও অসাধু উপায়ে দেদারসে টাকা কামাচ্ছে! সুতরাং আমাদের সাবধান হতে হবে এবং দায়িত্বশীলতার সাথে আশপাশের মানুষজনকেও সচেতন ও সাবধান করতে হবে। তবে তার জন্য সবার আগে আত্ম উপলব্ধি বা নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণ জরুরী।
যদি একটা তথ্যকে মিথ্যা বা গুজব হিসেবে বুঝতে পারি, তবে মহৎ কাজ হবে সেসবে কান না দেয়া বা বিশ্বাস না করা। কেউ একজন মসজিদের মাইকে বলল, অমুক বাড়িতে ডাকাত পড়েছে আর অমনি হুক্কা হুয়া বলে নিরীহ মানুষকে পেটাতে শুরু করবো? সত্য মিথ্যা ভাববো না? আমার মগজ তো অন্য কাউকে বর্গা দেইনি? নাকি?
অসভ্যরা ছবি, ভিডিও বিভিন্ন উপায়ে কাটপিস করে, সময়-অবস্থান সবকিছু পাল্টে বা বানিয়ে বানিয়ে কত কি যে করছে তার কোনো হিসাব নেই। পৃথিবী জুড়েই কমবেশি এমন মিথ্যাচার চলছে।
তাই আসুন মিথ্যাকে, গুজবকে আর রটনাকে বুঝতে শিখি এবং না বিলিয়ে রুখে দেই। নয়তোবা এই সমাজ ব্যাধি থেকে আমি আপনি কিন্তু নিস্তার পাবনা। আজ হয়তো বেঁচে যাচ্ছি কিন্তু কাল? এর কি নিশ্চয়তা যে একদিন আপনি বা আমি গুজবে আক্রান্ত হবো না? মনে রাখি যেন, প্রযুক্তি মানুষের চেহারা, কণ্ঠস্বর, স্থান-কাল, সব হুবহু কপি করে ফেলছে! তাই হুবহু মিলে গেলেই যে সেটা বানানো, গোলমেলে, বা গোজামিলে পূর্ণ নয় সেটা আপনি ভাবলেন কি করে?  সময়টা এখন এমন যে আমরা যারা এখনো মরিনি তাদের প্রকৃত অর্থেই জেগে থাকতে হবে। নতুবা একদিন আদতেই মরে পড়ে থাকবো গুজব আর মিথ্যার গহ্বরে এবং সে সময় কিন্তু দূরবর্তী নয় বরং অতি নিকটবর্তী। তাই আসুন সবাই দায়িত্বশীল হই এবং সেভাবে পথ চলতে চেষ্টা করি।
লেখক: অভিনেতা।
 

শেয়ার করুন: