শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

খাইরুল ইসলাম পাখি’র  কিচিরমিচির- তেতাল্লিশ

সবার দেখার চোখ  এক না, এটাই সত্য

খাইরুল ইসলাম পাখি

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

সবার দেখার চোখ  এক না, এটাই সত্য

ছবি: সংগৃহীত

আকাশে চেয়ে আমি হয়তো দেখছি নীল রঙা আকাশ কিন্তু আপনি হয়তো দেখছেন ধূসর। এমনিভাবে আপনি বা আমি একই জিনিস ভিন্ন ভাবে দেখছি। অন্যজন হয়তো আরো অন্যভাবে দেখে। এটাই নিয়ম বা সত্য, যেভাবেই বলি না কেন। মোদ্দা কথা প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা চেতনা, কিংবা বিচার বিশ্লেষণের বিষয়গুলো আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করে।

ঠিক তেমনি করে পছন্দ-অপছন্দের বা ভালো লাগা মন্দ লাগার বিষয়গুলো ভিন্নতর হয়। আর এটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আমার দেখা বা পছন্দের সাথে বা মতের সাথে কারো অমত হয়, বিপত্তিটা সেখান থেকেই শুরু হয়। মানুষের মনজগৎ কি অদ্ভুত দেখুন, আমরা সবাই চাই অন্যরা আমার মতই দেখুক, ভাবুক বা মত প্রকাশ করুক। কিন্তু সেটা কি করে হয়? এমন ভাবা বা আশা করাও তো বাহুল্য। প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। আর বেড়ে ওঠা, অবস্থান, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে জীবনের যুদ্ধ সবই ভিন্ন। তাই সবার মনোজগতও ভিন্ন হয়। বায়োলজিক্যালিও সকলের মস্তিষ্ক ভিন্নতর হয়, ভিন্ন ভাবে কাজ করে। তাই, যদি এই সত্যকে সত্য ভেবে নেই তবেই কিন্তু কোন ঝামেলা নেই।
আমার স্ত্রী, আমার সন্তান, আমার স্বামী, আমার বন্ধু, আমার কোন আত্মীয় আমার মত করে ভাববে না। আমার কথায়ও সর্বদা সায়ে দেবে না, এটা খুবই স্বাভাবিক। আপনার ক্ষেত্রেও একই বিষয়। আমি যেমন  চেষ্টা করি কথা বলার সময় অন্যকে জায়গা দিতে কিংবা অন্যকে শুনতে। অন্যের সঠিক যুক্তিটা বা তথ্যটা নেয়ার চেষ্টা করি। আমি আমার সন্তানদের থেকেও শিখি। এমনকি চাকুরীর সুবাদে আমি আমার শিশু ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকেও প্রতিদিন শিখি। শেখার মাঝে অপার আনন্দও খুঁজে পাই!
একটি গ্লাসের পানিকে কেউ দেখে অর্ধেক ভরা কেউবা দেখে অর্ধেক খালি। দুপক্ষই কিন্তু সঠিক, এ নিয়ে তর্ক করাই বরং সময় নষ্ট। যদি আমি ভেবেই নেই আমি কারো কথা শুনবো না, মানবো না, কারো কাছ থেকে কিছু জানবো না, কিছু শিখবো না, তবে তা গোয়ার্তুমি। সবাইকে আমার মত করেই ভাবতে হবে কেন? কেনইবা আমার চোখে সবাই দেখবে? সবার নিজস্বতা আছে, স্বাতন্ত্র আছে- দেখবার, ভাববার, বলবার, যেমন আমারও আছে। এভাবে ভাবলেই তো হয়, নিজেদের মাঝে সহনশীলতাও বাড়ে, মর্যাদাবোধও বাড়ে।
আজকের সময়ে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানোটা এতটাই আবশ্যক ও জরুরী যে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই বিষয়টা আমরা সবাই উপলব্ধি করছি কিন্তু চর্চায় আনছি না। আমার এই লেখার আর্তনাদটি কিন্তু সেখানেই। এসব কথা বা চিন্তা আমি আমার নিজেকেই বারম্বার মনে করিয়ে দেই, আমার নিজস্ব আত্মশুদ্ধির জন্য। কেননা আমি আত্মহননে বিশ্বাসী নই, বরং আমি সামনের দিকে হাঁটতে বা দেখতে পছন্দ করি। আমি তর্কের খাতিরে তর্ক করতে চাই না। অন্যের সঠিক কথা বা চিন্তায় আমার সমর্থন বিলাতে চাই। কেননা আমরা সবাই আদতেই ভিন্ন ভিন্ন। যদিও একে অন্যকে সাথে করে বা সাথি করে বেঁচে থাকি কিংবা বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।
লেখক: অভিনেতা। 
 

শেয়ার করুন: