শাহাব উদ্দিন সাগর
আমরাও মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করলাম। এটি রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে যাচ্ছে। এই শহরে মানুষ গাড়িতে চড়ে হাঁটার গতিতে চলে। রাস্তায় হাঁটতে যাবেন সেখানেও পথচারীর ভিড়ে স্বস্তি নেই। এ রকম রাজধানী শহরে ১০০ কিলোমিটার বেগে চলাচল অকল্পনীয়। মাত্র ১০ মিনিটে রেল পৌঁছে যাবে উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা আগারগাঁওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, মোটামুটি সময়মতো কাজের অগ্রগতি। এ দেশে একটি প্রকল্প শুরু হলে সেটি বারকয়েক পেছাবে। সেই সাথে ব্যয় বাড়বে। দেশের বেশির ভাগ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ সময়ে সম্পাদিত হয়। কিছু কিছু প্রকল্প শুরু হলে আর শেষ হওয়ার লক্ষণ থাকে না। এমন প্রকল্পের সংখ্যা এখন বহু। মেট্রোরেলের পুরো প্রকল্পের খুব সামান্য একটি অংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। যদিও এটি ২০২১ সালে সম্পাদিত হওয়ার কথা ছিল।
মূলত জাপানি সাহায্য সংস্থা-জাইকার সাথে এ প্রকল্প নিয়ে সরকারের চুক্তি হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জাইকা জোগান দেবে ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তখন এটি ছিল দেশের দ্বিতীয় প্রধান অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। ইতোমধ্যে প্রকল্পের একটি অংশ বাস্তবায়ন ও উদ্বোধনের বিষয়টি ইতিবাচক।
গত বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রাস্তায় চলবে মেট্রোরেল। পরবর্তী ধাপে এটি কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত হবে। প্রাথমিকভাবে একেকটি ট্রেন ১০ মিনিট পরপর চলবে। পরে চলবে সাড়ে তিন মিনিট পরপর। স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য ১০ মিনিট অপেক্ষা করবে ট্রেন। যাত্রীদের এর সাথে অভ্যস্ত করার জন্য একটু বেশি সময় দেয়া হচ্ছে। আগামী বছরের মার্চে এর পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হলে স্টেশনে যাত্রাবিরতি বা যাত্রী ওঠানামা ও আসন গ্রহণের সময় কমে আসবে। এর ধারণক্ষমতা দুই হাজারের বেশি হলেও শুরুতে এক-তৃতীয়াংশেরও কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। জাতীয় গ্রিড থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে ট্রেন চলবে। ট্রেনে থাকবে জেনারেটরও।
নিঃসন্দেহে এ ট্রেন রাজধানীর মানুষের যোগাযোগে গতি আনবে। দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর-পুরো লাইনটি চালু হলে এটি যানজটের ক্ষতি কমাবে ৯ শতাংশ। যানজটের কারণে দেশের মানুষের বিপুল অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। এটি দেশের উৎপাদনকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে। তবে মেট্রোর ভাড়া নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এর ভাড়া বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে কিলোমিটার-প্রতি কোথাও অর্ধেক, কোথাও এক-তৃতীয়াংশ ভাড়ায় চলে। ঢাকায় এর সর্বনিম্ন ভাড়া ধরা হয়েছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতে লাগবে ৬০ টাকা। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা এ ভাড়া ৩০ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। একটি যোগাযোগের সফলতা হচ্ছে এটি গণমানুষের হয়ে ওঠার মধ্যে। যদি নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের বড় একটি অংশ এতে চড়ার সুযোগ নিতে না পারে বা চড়তে গিয়ে চাপে পড়ে তাহলে মেট্রোরেল প্রকৃত গণপরিবহন হয়ে উঠতে পারবে না।
রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে মেট্রোরেল চালুর মহাপরিকল্পনায় এ ধরনের আরো পাঁচটি রুট রয়েছে। ছয়টি লাইন ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। তাতে দিনে ৫০ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর চিত্র পাল্টে যাবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার একটি নেতিবাচক দিক হচ্ছে- এ নিয়ে কাজের চেয়ে প্রচারণা বেশি। আমরা আশা করব, প্রকল্পের বাকি কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হবে।