ফাইল ছবি
একটা সময় ছিলো পরকীয়া প্রেমকে জঘণ্য অপরাধ হিসেবে মনে করা হতো। কিন্তু সময় বদলেছে, তাইতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই নিষিদ্ধ বিষয়টিও অনেকখানি স্বাভাবিক রূপ নিয়েছে তাদের মনস্তত্বে। গ্লিডেন’ নামক একটি বিবাহ-বহির্ভূত ডেটিং অ্যাপ সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। যে অ্যাপটি মূলত তৈরি হয়েছে মহিলাদের উদ্দেশ্য করে। এবং বলে রাখা ভাল এই অ্যাপটির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১৩ লক্ষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সি শহুরে, শিক্ষিত, আধুনিকা, কর্মরত মহিলাদের উপর এই সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যে প্রায় ৪৮ শতাংশ মহিলা পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে আরও একটি তথ্য উঠে আসছে যে এই ৪৮ শতাংশ মহিলা প্রত্যেকেই একজন মা।
তবে পরকীয়া ব্যাপারটা সমাজে অনেকটা প্রচলিত হলেও এটা পছন্দ করেন না সমাজে এমন লোকের সংখ্যাই বেশী। আর এই পরকীয়া শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, এমন বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক, বহুগামী পুরুষ সঙ্গীকে পছন্দ করে না পাখিও! সঙ্গীরঅগোচরে বা অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে দেখলেই কাছে পাওয়ার বাসনায় উতলা হয়ে ওঠা পরাসক্ত, ছোঁকছোঁকে স্বভাবের সঙ্গী গুলোকে ঘৃণাভরে ছুঁড়ে ফেলে পক্ষী সমাজও।
দীর্ঘ অদেখা, দূরত্বের অজুহাত বা এক ঘেয়েমির বাহানায় পরকীয়ায় ঝুঁকে পড়া এসব পুরুষ পাখির কারণেই সাজানো সংসার ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে পক্ষীকুলে-বাড়ছে ‘অকাল বিচ্ছেদ’। গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত চীন ও জার্মানির এক যৌথ গবেষণা বিষয়ক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে।
রিটেনের জীববৈচিত্র্যবিষয়ক ‘প্রসেডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি জার্নালে’ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, হাজার হাজার পাখিকে এখন জীবনসঙ্গী ছাড়াই দেখা যাচ্ছে। বিস্তৃত পাখির প্রজাতি ভেদে বিচ্ছেদের নানা কারণ থাকলেও প্রধান দুটি কারণ পাওয়া গেছে বলে জানান গবেষকরা। এর মধ্যে প্রথম কারণটি হলো ‘পুরুষ পাখির বহুগামিতা’ (সঙ্গী থাকতেও অন্যপাখির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলা)। অন্যটি হলো অভিবাসনের ফলে স্ত্রী বা পুরুষ পাখির একে অপরের কাছ থেকে ‘দীর্ঘদূরত্বে’ যাওয়া।
গবেষকরা মৃত্যুর তথ্য ও অভিবাসন দূরত্বসহ ২৩২ প্রজাতির পাখির বিচ্ছেদের হার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন, যা পাখির আচরণ সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। গবেষণা দলটি প্রতিটি প্রজাতির পুরুষ ও মহিলা পাখির বহু গামিতা নিয়ে পৃথকভাবে স্কোরিং করেন। বিবর্তনীয় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেও একটি বিশ্লেষণ চালানো হয়। ফলাফল গুলোর মাধ্যমে জানা যায়, উচ্চ বিচ্ছেদের হার সত্ত্বেও প্রজাতিগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে থাকে। প্লোভার, সোয়ালো, মার্টিন, ওরিওল ও ব্ল্যাকবার্ড প্রজাতির মধ্যে উচ্চ বিচ্ছেদের হার বেশি লক্ষ করা যায়। এসব প্রজাতির পুরুষ পাখির মধ্যে বহুগামিতাও বেশি। অন্যদিকে পেট্রোল, অ্যালবাট্রস, গিজ ও রাজহাঁসের বিচ্ছেদের হার কম। এসব প্রজাতির পুরুষ পাখি একই সঙ্গীদের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দীর্ঘ সময় পার করে।
গবেষণায় জানা যায়, পুরুষ পাখির বহু গামিতায় বিচ্ছেদের হার বেশি হয় এবং স্ত্রী পাখির বহু গামিতার কারণে বিচ্ছেদের হার তুলনামূলক কম হয়। গবেষণা দলটি আরও জানায়, অভিবাসন দূরত্ব বেশি হলেও বিচ্ছেদের হার বাড়ে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক সঙ্গে নীড়ে ফিরতে পারে না পাখি দম্পতিরা। সেক্ষেত্রে আগে ফিরে আসা পাখিটি অন্য সঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গম করার প্রবণতা থাকে বেশি। ‘প্রাথমিক আগমন’ রূপ নেয় বিচ্ছেদে। তবে আগের সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন সম্পর্ক প্রজনন সহজতর করতে পারে বলে মনে করেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. জিটাং সং এই গবেষণাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।