শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

খাইরুল ইসলাম পাখির  কিচিরমিচির-চব্বিশ

এ কি মানুষের ভালবাসার  সঙ্গে  সাকিবদের  প্রতারণা!

খাইরুল ইসলাম পাখি

আপডেট: ১৮:২৬, ২৮ জুন ২০২৪

এ কি মানুষের ভালবাসার  সঙ্গে  সাকিবদের  প্রতারণা!

ছবি: সংগৃহীত

১০ জুন, সোমবার, ২০২৪-এর এই দিনটি বাঙালিদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ দিন প্রবাসী বাঙালিদের ঢল নেমেছিল লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বাঙালির উচ্ছসিত কলরবে প্রকম্পিত হয়েছিল নিউইয়র্ক।
 ৩০ হাজারের মতো বাঙালি এই প্রথমবারের মতো একাট্টা হয়েছিল ক্রিকেট আর দেশকে ভালোবেসে এই বিশ্বসেরা শহরে। প্রান নিংড়ানো আবেগ ঢেলে সবাই সমস্বরে গেয়েছে প্রাণের সুর ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি‘। আকাশে যখন সহস্র লাল সবুজ পতাকা উড্ডীন, তখন ক্রিকেট বিশ্ব দেখছিলো যুদ্ধ জয়ের নেশাতুর  বাঙালির সেই চিরচেনা রূপ! তাইতো এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুকাল।

আর যদি জিতে যেতাম সেদিন, সে যে কি বরনীয় হতে পারতো! ভাবাই যায় না।
খেলায় হারজিত থাকবেই। দু‘পক্ষ তো আর জেতে না, কিন্তু যুদ্ধে নেমে হার মানেতও নারাজ দু‘পক্ষ। আর যুদ্ধটা সেখানেই। এটা হেলাফেলা নয় বরং যুদ্ধই। যুদ্ধ জয়ের জন্য লাগে একাগ্রতা, লক্ষ্য, সাহস, আরো লাগে সততা। আর অন্তরে ভালোবাসা আবেগ থাকতে হয় দেশ-মা-মাটি ও মানুষের জন্য।
৫২ আর ৭১ তাই শিখিয়েছে বাঙালিকে। 
কিন্তু আমাদের ক্রিকেট যোদ্ধাদের কারো কারো গা ছাড়া কিংবা কা-জ্ঞানহীন আচরণ মানুষকে ব্যথিত করে, ক্ষুব্ধ করে, যখন তারা দেখতে পায় নানান অসংগতি! একটা জাতীয় দল বিশ্বকাপ খেলতে এলো, কিন্তু তাদের টিম ডিসিপ্লিন এর কি হলো? এরা কি করে তোলা তুলতে (ফান্ড রাইজিং) এখানে সেখানে যায়? বার্বিকিউ পার্টি করে, বিরিয়ানি খেয়ে বেড়ায় খেলার আগেরদিন!?
যা ইচ্ছে করে তাই করে! প্রটোকল বলে কি কিছু নেই? টুর্নামেন্ট চলার সময় তো এদের আত্মীয়দের থেকেও আলাদা থাকার কথা। পুরো ধ্যানে জ্ঞানে তখন খেলা আর খেলা, ক্রিকেট আর ক্রিকেট থাকবে। গোটা জাতির ভালোবাসা বা ভাবাবেগকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যখন এরা খেলতে এসে যত্রতত্র হাওয়া খেয়ে বেড়ায় আর দাঁত কেলিয়ে সেলফি সেলফি খেলে, তখন তো যুদ্ধের ময়দানে এরা অস্থির থাকবেই! এদের মনে বা ব্রেনে যখন নানাবিধ কীটপতঙ্গ  ভনভন করে, তখন এরা খেলায় মনোনিবেশ করবেটা কি করে? জেতা ম্যাচও তখন হাত থেকে বেরিয়ে যায় সাউথ আফ্রিকা, আফগানিস্তান কিংবা অন্য কারো ঘরে, যা খুবই স্বাভাবিক। 
বলা বাহুল্য আমাদের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের তো বাজার খরচা, বাড়ি ভাড়া কিংবা বৌদের জুয়েলারি কিনবে কি করে সেসব ভাবতে হয় না। এমনটাতো করতে হয় আমাদের নারী ফুটবলার আর নারী ক্রিকেটারদের। যা কিনা খুবই দুঃখজনক। কারণ সম্প্রতি সময়ে আমাদের নারীদের সাফল্য সবারই জানা, তারপরও তারা অবহেলিত! এছাড়া জিমন্যাস্টিক, বক্সিং বা অন্যান্য খেলায় যারা বিজয় এনে দেয় তাদের আমরা কি দেই? জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যা পায় তার ছিঁটে ফোঁটাও পায় না অন্যরা।  পুরুষ ক্রিকেটাররা যে উচ্চ বেতন আর স্বর্গীয় সুবিধা উপভোগ করে তাতো মূলত জনগণের টাকাতেই। মানুষের আক্ষেপ বা ক্ষোভটা কিন্তু সেখান থেকেও আসে। মানুষের ভালোবাসার মূল্য তারা দিচ্ছেটা কই?
আগেই বলেছি খেলায় কাউকে হারতেই হয়। আর সাউথ আফ্রিকা মামুলি কোন দলও নয়। তারা বলও করছিল দুর্দান্ত, সাথে ফিল্ডিংও। আমাদের প্লেয়ারদের কারো কারো প্রাণান্ত চেষ্টা যে ছিল না, তা বলব না। আম্পায়ারের একটা এলবিডব্লিউ‘র সিদ্ধান্তও আমাদের হারিয়েছে বলে মনে করেছেন অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে দিনটিও হয়তো আমাদের ছিল না। কিন্তু সাকিব ও আরো ক‘জন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাছ থেকে মানুষ অনেক বেশি দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করেছিল। অন্যদিকে মাঠের বাইরেও সাকিবের অযাচিত নানাবিধ আচরণ প্রবাসী বাঙালি ও দেশবাসীর কাছে বারংবার হতাশার কারন হয়ে চলেছে! সম্প্রতি বীরেন্দ্র শেবাকও সাকিবের নির্বুদ্ধিতার সমালোচনা করতে ছাড়েনি।
বাঙালি ক্রিকেট পাগল জাতি এবং সাংঘাতিক আবেগি জাতি। কাউকে ভালোবাসা দিলেও উজাড় করে দেয়।
তাইতো নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে, রোদ বৃষ্টি মাথায় করে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে-আনন্দে ক্রিকেট মাঠে বারংবার নামে বাঙালির প্লাবন! এমতাবস্থায় সাকিবদের কারো কারো খাম খেয়ালীপনায় যখন দল হারে, তখন তা মানুষের ভালবাসা ও আবেগের সাথে প্রতারণারই সামিল। 
আমরা কাউকে বিজয় বিলিয়ে দিতে চাই না। একাগ্রচিত্তে যুদ্ধ করে জিততে বা হারতে চাই। যুদ্ধে নেমে হটকারীতা শত্রুতারই সমান। ভবিষ্যতে আমাদের ক্রিকেটারদের প্রতি ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালির অন্তরের একটাই বচন এবং আঁকুতি ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচ্যগ্র মেদিনী‘। মিনতি করি এই পংক্তি আমাদের ক্রিকেট যোদ্ধাদের অন্তরে ও মননেও প্রথিত হোক, জাগরুক থাকুক।
আমরা তথাকথিত (মায়ের দোয়া) ক্রিকেট টিম চাইনা। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বে ভরা সাহসী, সত্যাশ্রয়ী এক ক্রিকেট টিম। যারা হারুক কি জিতুক, মা-মাটি আর মানুষের জন্য একাগ্র থেকে ব্যাঘ্র চিত্তে লড়বে- ঠিক আমাদের ভাষা সৈনিক আর অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতো।
 

শেয়ার করুন: