বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

সাপ্তাহিক নবযুগ :: Weekly Nobojug

বিশেষ সম্পাদকীয়

নব চেতনায় নবযুগ’র নব জাগরণ

শাহাব উদ্দিন সাগর

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

নব চেতনায় নবযুগ’র নব জাগরণ

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১০ জানুয়ারি। সাপ্তাহিক নবযুগ’র পঞ্চম বছর পূর্তির দিন। যেহেতু নবযুগ প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হয় সে হিসেবে আজ শুক্রবার নবযুগ’র পাঁচ বছর পূর্তি সংখ্যা। মানে আজ ১০ জানুয়ারি যে সংখ্যা আপনার বা আপনাদের হাতে সেটি নবযুগ’র পঞ্চমবর্ষে পদার্পণ সংখ্যা। আজকের এই দিনে আমরা পুলকিত, উল্লসিত। কারণ আমরা একটি কঠিন সময় পার করে ষষ্ঠ বর্ষে পা দিয়েছি। আমাদের এ পথ পাড়ি দেয়া ছিল খুবই কঠিন। এ কঠিনকে ভালোবেসে আমরা প্রতিটি সপ্তাহ পার করেছি পেশাদারিত্বের সঙ্গে। ‘দেশের সঙ্গে প্রবাসের সংযোগ’ যে শ্লোগান আমরা দিয়েছিলাম সেটি আমরা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। এতে কতটুকু সফল হয়েছি সেটি বিচার্য হলেও আমরা দাবী করতে পারি আমাদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। সাপ্তাহিক পত্রিকা থেকে আমাদের অনলাইন সংস্করণ, নবযুগ বুলেটিন মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। আমাদের সফলতার পালক ছড়িয়ে আমরা যাত্রা শুরু করতে পেরেছি নবযুগ টিভির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে আরো বেশি সক্রিয় নবযুগ। 

নিউইয়র্কে যখন বাংলা সংবাপত্রগুলো কঠিন সময় পার করছিল তখনই ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করেছিল নতুন পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’। ওই সময়ে পত্রিকাকে পাঠকপ্রিয় করে তোলা আর বিজ্ঞাপণের বাজার ধরা অত্যন্ত দুরুহ ছিল। কিন্তু এ কঠিন সত্য জেনেও ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার শপথে বলিয়ান হয়ে কাজ করেছে। প্রবাসে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে রেখে ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ পাঠকের সব চাহিদা পূরণ করতে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। 
প্রতি শুক্রবার নতুন নতুন কিছু নিয়ে পাঠক/বিজ্ঞাপণদাতাদের সামনে হাজির ছিল ‘নবযুগ’। ২০২০ সালে নবযুগ যাত্রা শুরুর অল্প কিছু দিনের মধ্যে মুখোমুখি পড়েছিল কঠিন বাস্তবতার। করোনা মহামারির সময় নিউইয়র্কের সব বাংলাদেশি মালিকানাধীন পত্রিকা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আর তখনই নবযুগ কঠিন দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ না করে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল নবযুগ। বিপদের দিনে নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের কাছে ‘অক্সিজেন’ হিসেবে কাজ করেছে নবযুগ। নিউইয়র্কের মৃত্যুপুরির মধ্যে প্রতি সপ্তাহে নবযুগ প্রকাশিত হয়েছে এবং করোনা মহামারির নানা তথ্য দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ জন্য নিউইয়র্কের বাংলা সংবাপত্র জগতে নবযুগকে ‘কভিড হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ কারণে নবযুগ অবশ্যই সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে ‘কভিড হিরো’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছে। করোনাকালীন পত্রিকা প্রকাশকে সাহস হিসেবে ধারণ করে আপোষহীনভাবে প্রকাশিত হচ্ছে নবযুগ। আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি করোনা মহামারিতে আমরা কঠিনকে জয় করেছি বুক টান করে, কমিউনিটির পাশে থেকেছি মরণের ঝুঁকি নিয়ে। বাংলাদেশ কমিউনিটির তরুণদের যখন ভয়াবহ মাদকের ছোবল মেরেছে তখন নবযুগ জেগে উঠেছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সচেতনা সৃষ্টিতে সবার আগে ভূমিকা রেখেছে। প্রথম বার-সব শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের অংশ গ্রহণে একটি সেমিনার করে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল নবযুগ। এছাড়া কমিউনিটির অনেক সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে নবযুগ প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। আর এ কারণে প্রতি শুক্রবার সকাল মানেই কমিউনিটির মানুষের হাতে নেওয়া প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক নবযুগ। এখন আমার এবং আমাদের শুক্রবার সকালের ঘুম ভাঙ্গে কমিউনিটির মানুষের টেলিফোনে নবযুগ নিয়ে উচ্ছ্বাস পেয়ে। আমরা এতে গর্বিত নয় বরং দায়িত্ব বাড়ানোর সংকল্প করি। আমরা কমিউনিটিতে গেল পাঁচ বছরে নতুন নতুন পাঠক, লেখক সৃষ্টি করার প্রয়াস নিয়ে সফল হয়েছি। আমাদের তৈরি করা লেখক, কবিরা এখন জাতীয় পর্যায়ে লেখালেখির যোগ্যতা অর্জন করেছে, এ কৃতিত্বের দাবীদার নবযুগ। আমরা শুরুতে যে ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়েছিলাম সে শপথে আজও বলিয়ান আছি। নবযুগ ২০২১ সালে পাঁচ তারকা হোটেলে যে ‘গেট টুগেদারের’ আয়োজন করেছিল সেটি এখনও আলোচনার মধ্যে থাকে। সবমিলে নবযুগ সব সময় ভিন্নতা দেখিয়েছে, দেখিয়েছে নতুনত্ব। ষষ্ঠবর্ষ পদার্পনে এ প্রত্যয় আবার স্মরণ করিয়ে দিতে পারি। আমরা দৃঢভাবে বলতে পারি, কমিউনিটির সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশির হয়েছে ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’। 
সাপ্তাহিক নবযুগ একটি ‘ঐতিহাসিক পত্রিকা’র নাম। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২০ সালে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং রাজনীতিবিদ কমরেড মুজফ্ফর আহমদ’র যুগ্ম সম্পাদনায়। এটি ১৯২০ সালের ১২ জুলাই সান্ধ্য পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু  করে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুক হক। তিনি নিজ অর্থে এই পত্রিকা প্রকাশ করেন। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অনেক কবিতা ছাপা হলে এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার এ পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করার পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। শের-ই-বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের চেষ্টায় ‘নবযুগ’ আবার প্রকাশিত হয়। পরে ফজলুল হকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে নজরুল ও মুজফ্ফর আহমদ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করলে পত্রিকাটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। 
১৯৪২ সালে শেরে-ই- বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর উদ্যোগে এবং কবি নজরুলের সম্পাদনায় পুনরায় ‘নবযুগ’ প্রকাশিত হয়। এ সময় কাজী নজরুল ইসলাম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে খুলনার আহমদ আলী সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দু’বছর পত্রিকাটি চালু থাকার পর চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
আমরা ‘নবযুগ’ নামটি বেছে নিয়েছিলাম ; একটি শতককে কেন্দ্র করে। ‘নবযুগ’ বের হয়েছিল ১৯২০ সালে। ২০২০ সালে আমি নিউইয়র্ক থেকে ‘নবযুগ‘ প্রকাশ করায় বিষয়টি দাঁড়ায় ‘নবযুগ’ সৃষ্টির একশো বছর পর নিউইয়র্ক থেকে নতুন ধারা নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’। ‘নবযুগ’ একটি ফ্রি পত্রিকা। এটি নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত মসজিদ, গ্রোসারি ও সুপার মার্কেটসহ সবখানে পাওয়া যায় প্রতি শুক্রবার। ‘নবযুগ’ নিয়মিত  ৪০ পাতা আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। ‘নবযুগ’র আছে একটি শক্তিশালী ওয়েবসাইট। ফেইসবুক ও ইউটিউবেও সরব উপস্থিতি রয়েছে ‘নবযুগ’র। 
‘নবযুগ’প্রকাশ করা হয়েছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মুক্তিকামী মানুষের কথা বলতে। বর্তমান বিশ্বে যখন গণমাধ্যমের উপর খড়গ নেমে আসছে বা মুক্তিকামী মানুষ মুক্তির লড়াই করছে তখনই ‘নবযুগ’ নামে পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আমি মনে করি ‘নবযুগ’ নামে পত্রিকা প্রকাশের উপযুক্ত সময়ই নবযুগ প্রকাশিত হয়। 
ভারতে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর নামে বাংলাদেশে পরবর্তীতে প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা রয়েছে বেশক’টি। এগুলো ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশিদের সম্পাদনায় যখন প্রকাশিত হয়েছে তখন ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেমন ‘জনকন্ঠ’, ‘যুগান্তর’, ‘জাগরণ’, ‘বর্তমান’ নামে ভারতে পত্রিকা রয়েছে। এসব নামের পত্রিকা বাংলাদেশেও প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তায়। এছাড়া প্রবাসেও রয়েছে ভারতীয় পত্রিকার নামে অনেক পত্রিকা।
একশো বছর আগে ‘নবযুগ’ প্রকাশের সময় শুধু প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতে পত্রিকাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। আমি প্রতিবাদের ভাষার পাশাপাশি নতুন শ্লোগান দিয়েছিলাম; ‘দেশের সঙ্গে প্রবাসের সংযোগ’। কারণ বিদেশে এসে যখন অনেক মানুষ মাতৃভূমি বা শেকড় ভুলতে শুরু করেছেন তখন ‘নবযুগ’র ‘দেশের সঙ্গে প্রবাসের সংযোগ’ শ্লোগানটি যথার্থ বলে মনে হয়েছিল।
ষষ্ঠবর্ষে পদার্পণের ক্ষণে জোর দিয়ে ঘোষণা করতে চাই; ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে ঠিক গেল বছরগুলোর মতো বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ করতে। সবক্ষেত্রে ‘নবযুগ’ থাকবে আগের মতো নিরপেক্ষ। বাংলাদেশ এবং আমেরিকার সার্বভৌমত্বে আঘাত আসলে ‘নবযুগ’ এগিয়ে যাবে সবার আগে। ‘নবযুগ’ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত সেটি লালন করবে। 
‘সাপ্তাহিক নবযুগ’র সম্পাদকীয় নীতি হয়েছে উদার, ভবিষ্যতেও তা হবে। কারো রক্ষ চক্ষুকে ভয় পেতে ‘নবযগ’র সৃষ্টি হয়নি। বিজ্ঞাপণ বাণিজ্যের কাছে সম্পাদকীয় নীতি ও নিরপেক্ষতা বিক্রি ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ কখনো করেনি, করবেও না। এ নীতি ধরে রাখতে গিয়ে কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হয়েছে নবযুগকে। এভাবে মনোবল এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নবযুগ। 
পাঠক আর কমিউনিটির মানুষের ভালোবাসাই ‘নবযুগ’র প্রাণ। কমিউনিটির মানুষ ভালোবাসায় ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপণের বাজারেও জায়গা করে নিতে পেরেছে নবযুগ। কিন্তু স্বকিয়তা বিক্রি করে ‘নবযুগ’ বিজ্ঞাপণের বাজার ধরার চেষ্টা করেনি। ‘নবযুগ’ সব সময় চেষ্টা করছে নিউজের কনটেন্ট আর লেখার প্রতি গুরুত্ব দিতে। এ কারণে পত্রিকায় ৬০ ভাগ কনটেন্ট রাখতে বন্ধপরিকর ছিল ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’। 
‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ প্রবাস প্রজন্মের যা কিছু ভালো সবগুলোর সঙ্গে থেকেছে। একইসঙ্গে তাদের সচেতন এবং বাংলার প্রতি মমত্ববোধ বাড়াতে সামনে থেকে কাজ করেছে। ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’র ভাষা ছিল অত্যন্ত সহজ এবং সরল। 
‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ চাকচিক্য কাগজের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে দৃষ্টি দিয়েছে সংবাদ এবং সংবাদের প্রতি। কমিউনিটিতে যে পথে আপোষ করতে হয় সে পথ থেকে অনেক দূরে থেকেছে ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’। সাহস আর নিজস্ব ভীতের উপর দাঁড়িয়ে অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’। যত বড় শক্তি হোক না কেন শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে সেই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঠিকে থাকার। 
কমিউনিটির সবার সাহস আর শক্তি ‘নবযুগর’র সঙ্গে ছিল। যে পত্রিকার সঙ্গে কমিউনিটির মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসা আর সমর্থন ছিল সে পত্রিকাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। আর যারা  ঠকাতে বা ঠেকাতে চেষ্টা করেছে তারা প্রতিরোধের শিকার হয়েছে  কমিউনিটির মানুষের। 
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’-‘প্রবাসের সঙ্গে দেশের সংযোগ’। ‘সাপ্তাহিক নবযুগ’ যুক্তরাষ্ট্রের পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষ পত্রিকা। - সম্পাদক। 
 

শেয়ার করুন: