ফাইল ছবি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আবারো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে কানাডার আদালত। এ নিয়ে দলটি পঞ্চমবারের মতো কানাডার আদালত থেকে সন্ত্রাসী খেতাব পেলো। বিএনপির এক নেতা মোহাম্মদ জিসেফ ইবনে হক মিথ্যা, বানোয়াট, আজগুবি তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগারের কল্পকাহিনী তৈরি করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণা করলে কানাডার আদালত তদন্ত করে দেখতে পান এই প্রার্থীর দেয়া সব তথ্য ভূয়া এবং সাজানো গল্প। একারণে সাথে সাথে তার আবেদন নাকচ করে দেয়।
রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয় এই আশ্রয় প্রার্থী ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সদস্য ছিলেন। আর এই সংগঠন বিএনপি সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে। আবেদনকারীকে কানাডার অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সুরক্ষা আইন ৩৪ ধারায় দেশটিতে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে।
ধারায় আরো উল্লেখ করা হয়, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের সঙ্গে সরাসরি কিংবা প্ররোচনায় জড়িত বা একটি গণতান্ত্রিক সরকার, প্রতিষ্ঠানে বা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কাজে জড়িত এবং সরাসরি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তারা কানাডায় বসবাস করতে পারবে না। এর আগে ২০১৮ সালে আরও এক বিএনপি নেতা মাসুদ রানা ও ২০২২ সালে সেলিম নামে অপর দুই কর্মীর আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেয় দেশটির আদালত। সেই সময়ও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে রায় দেয় তারা। ২০১৭ সালে আরও এক সন্ত্রাসী দেশে চুরি করে পালিয়ে এসে কানাডার আদালতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিল সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য জমা দিয়ে এবং দাবি করেছিল নিজকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী হিসেবে। আদালত যাবতীয় তথ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে বুঝতে সক্ষম হয় যে, তার দেয়া যাবতীয় তথ্য চরম মিথ্যাচারের সাজানো গল্প এবং প্রার্থী একজন সন্ত্রাসী, তাই আদালত তার আবেদনও নাকচ করে দেয়। এই হল বিএনপি সন্ত্রাসীদের চরিত্র।
আসলে ওরা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে কিছু কিছু হয়ত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল, তবে ওদের কোন যোগ্যতা নেই। মূলত ওরা সন্ত্রাসী, নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতো বিএনপির আশ্রয় প্রশয়ে থেকে। ওরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রথমেই যে কাজটি করে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে আর সেটি প্রমাণ করার জন্য নিজকে দলীয় কর্মীর পরিচয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য আজগুবি, বানোয়াট গল্প সাজিয়ে আমেরিকা, কানাডার আদালতে জমা দেয় এরপর কোন কোন আশ্রয় প্রার্থীর আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। আবার অনেকের আবেদন নাকচ করে দেয়। তারা দেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে একটি নির্বাচিত সরকারকে হটাতে চায় যা কোন অবস্থায় কানাডার আদালত আমলে নেয়নি।
বিএনপির জন্ম দেয়া হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। ১৯৯১ সালে যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে বর্বর পাকিস্তানী মিলিটারি শাসকদের পক্ষ নিয়েছিল, বর্বর পাকিস্তানী সৈন্যদের বাংলার সাধারণ মানুষের উপর লেলিয়ে দিয়েছিল হত্যা করার জন্য, আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ করার জন্য তারাই মূলত পরাজিত আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানের পক্ষে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াকে দিয়ে বিএনপি গঠন করায়। জিয়া বিশেষ সামরিক ফরমান জারি নিজকে চীফ মার্শাল-ল, এডমিনিস্ট্রেটর অপর দিকে নিজকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে এদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু করেন। সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর জোয়ান এবং অফিসারদের মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালের মত ক্যাঙ্গারু কোর্ট বানিয়ে ১ মিনিটের মধ্যে রায় ঘোষণা দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হত।
এভাবে ১২ হাজারের বেশী সেনা সদস্যদের হত্যা করে স্বৈরাচারি জিয়া। এরপর নিজের অপকর্মের বৈধতা পাওয়ার জন্য এদেশে গণভোট বা রেফারেনডামের মাধ্যমে নিজের পক্ষে শতভাগ হাঁ ভোট দেখিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির কবর রচনা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয় এই স্বৈরাচারি সারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে থাকা দেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী আলবদর, রাজাকারদের ধরে এনে তাদেরকে তার পার্লামেন্টে মন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ সদস্য বানান এবং বাইরে সরকারি প্রতিষ্ঠান, আধা সরকারি, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি কর্পোরেট কোম্পানীর শীর্ষ পদে পাকিস্তানপন্থী রাজাকারদের বসানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল তাদেরকে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে বসিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের কুখ্যাত মেজর ডালিম, ফারুক, রশিদরা রাতের অন্ধকারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল। আবার এই খুনিদের রাতের অন্ধকারে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল এই স্বৈরাচারি।
এখানেই শেষ নয়, এই খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকুরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন জিয়া। স্বাধীনতার বিপক্ষে যা করা দরকার সব কিছুই করেছিলেন তিনি। আলবদর রাজাকারেরা পাকিস্তানী সৈন্যদের সাহায্য করেছিল, গোলাম আজম পাকিস্তানে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছিল, সেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী নাগরিক গোলাম আজমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন তিনি। এই হল সংক্ষেপে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ইতিহাস। আর তাকেও জীবন দিতে হলো রাতের অন্ধকারে সেনাবাহিনীর গুলিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে। হত্যাকারীরা তার লাশটাও পুড়িয়ে ছাঁই করে ফেলেছিল। সেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের চোরাবালি থেকে যে বিএনপির জন্ম হয়েছে সেই দলের আদর্শ হলো দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। দেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করে দেয়া। বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানো। তার স্ত্রী বেগম জিয়া যিনি দুর্নীতি আর লুটপাটের দায়ে কারাবন্দী দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনিও স্বামীর পদাংক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।
এমনকি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়েছিলেন। এই দলের জন্ম হয়েছে দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য, আজও দেশে নতুন করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য মাঠে নেমেছে তারা। প্রতিদিন জ¦ালাও-পোড়াও করছে। পেট্রোল বোমা মেরে জীবন্ত মানুষকে দ্বগ্ধ করেছে। বিদেশে এই দলের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে, কানাডার মাননীয় আদালত এটি বুঝতে সক্ষম হয়েছে বলে এই দলের সন্ত্রাসীদের ভূয়া রাজনীতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তা বাতিল করে দিয়েছে।
বিশে^র বিভিন্ন দেশে আমেরিকা, ইউরোপসহ যেসব দেশে এই সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। সরকার বিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত রয়েছে এইসব সন্ত্রাসীরা যদি মিথ্যা, ভূয়া, বানোয়াট তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে তাদের সকলের আবেদন নাকচ করে দেওয়া উচিত।
লেখক: সহ সভাপতি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ