চৌর্যবৃত্তির শিল্পকলা প্রসঙ্গে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক (যারা এ ধরনের কমকা-ে জড়িত) সার্টিফিকেটধারী কুশিক্ষিত, বিকৃত রুচির ধ্বজাধারী মনুষ্য নামের বিবেক বুদ্ধিতে বিকলাঙ্গ জন্তু জনাব আখতার আহমেদ রাশাকে ভাষ্করের মর্যাদা দিতে কি নির্লজ্জভাবেই না মরিয়া হয়ে লড়ে যাচ্ছে। শিয়ালের হুংকার দিচ্ছে, ভয় দেখাছে প্রতিদিন। কিন্তু ওরা জানে না আমরা কোন মায়ের সন্তান।
শুধু এদেরকেই বলি কেন,‘শ্বশুরের নাম মুখে নিতে মানা’ বলে আজ হয়তো কোনও চারুকলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়ালি হেডমাস্টার বা সরকারি সংস্কৃতির বড় দায়িত্ব পালন করা কোনও নাট্যজন ক্ষমতাধারী পঁচে যাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও কেউ নিতে পারছেন কই? এরাই তো ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর পাশে আখতার আহমেদ রাশার মতো মানুষকে শিল্পীর মর্যাদা দেওয়ার মিশনের নেপথ্য কারিগর হিসাবে ভূমিকা রেখেছেন। যা দেশের শিল্পকলার পক্ষে অত্যন্ত দুঃখজনক।
পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে চারুকলার একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র সাবেক ছাত্রনেতা বড়ভাই শিল্পীর সাহায্য প্রার্থনা করেছিলাম আমি। তিনি আমাকে যা বুঝালেন- ‘তূর্য তোমাকে বাংলাদেশের রিয়েলিটিটা বুঝতে হবে। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী চারুকলা থেকে পাশ করা কোনো শিল্পী ছিলেন না। এখানে গ্রুপ একটা বড় ফ্যাক্টর। তিনি ভাষ্কর্য শিল্পের নক্ষত্র হতে বা নক্ষত্র হওয়ার পরেও কোনো গ্রুপে যুক্ত ছিলেন না। এখানে শিল্পী হিসাবে চারুকলা পীঠস্থানের হেডমাস্টাররা প্রিয়ভাষিণীর পাশে দাঁড়াবেন, প্রতিবাদ করবেন এই ন্যায্য চাওয়াটা তোমার খানিকটা উচ্চাভিলাষ। শুধু জনৈক হেডমাস্টার বা সরকারি সংস্কৃতির মহোদয়ের দিকেই কেন আঙ্গুল তুলছি! সবচেয়ে হতবাক হয়েছি এ সময়ের অন্যতম এক আঁকিয়ে, হতে পারে প্রিয়ভাষিণীরই আত্মজ কেউ। সমকালীন বাংলাদেশের শিল্পী সমাজে যার হয়তো অনেক নাম ডাক। রাশার চৌর্যবৃত্তির পক্ষে শুরু থেকেই আমাদের নিবৃত্ত করে গেছে, নিরুৎসাহিত করে গেছে এই বলে যে, ‘বাংলাদেশের কোনো শিল্পী, সাংবাদিক, গ্যালারি ওউনার, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা তোমাদের সাথে এই নোংরা খেলায় (নির্লজ্জ চুরির প্রতিবাদে) থাকবে না। আমি তো নেইই! হয়তো শিল্পকলার পরিবেশের এই স্খলনে হয়তো খুশি হচ্ছে কিছু স্থুল নারীবাদী আর, আপনারা, যারা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ব্যক্তিত্বকে অনুসরণ করতেন’। এরপর আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না শুধু টাকা আর মদ ছিটিয়েই এদের কেনেনি রাশা, পিছনে নিশ্চয়ই আছে নিষ্ঠুর রাজনীতির আরও কোন হোলিখেলা। অদ্ভুত এক তামাশা আর উল্লাসে মেতেছে এই রাশা গংরা। যে কাজ কোনও প্রকৃত শিল্পী কখনোই করতে পারেন না, পারবেন না, সেই কাজ করে নাম কুড়াতে চাচ্ছেন রাশা। তা কি সম্ভব? সবাই কি পচে যেতে পারে একটি সমাজে, একই সময়ে? না। পারে না। বাংলাদেশেও শিল্পের নিবিড় দর্শক আছেন, যারা হতবাক হচ্ছেন রাশার এরকম তস্করবৃত্তিতে। যিনি একদা ফেরদৌসীর শিল্পকর্মের ক্রেতা ও ভক্ত হয়েই এসেছিলেন ধানমন্ডিতে, শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর স্টুডিওতে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্সে আমার ছোট বোন ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীর সাথে দেশের অনেক গুণীজন ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের পর শেষ পর্যন্ত প্রিয়ভাষিণীর আত্মজ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভুল শুধরে নিয়ে প্রতিবাদে নিজেকে যুক্ত করেছে। তার সেই হুঁশ ফেরা ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি হয়নি সেই বিতর্কে নাই গেলাম। তবে শিল্পকলার হেডমাস্টার স্যার আর সরকারি সংস্কৃতির মহোদয়ারা এতোটুকু বিব্রত হয়েছেন বলে মনে হয় না কারণ, রাশাকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রসঙ্গে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য নেই। রাশাকে প্রদর্শনীর সুযোগ দিয়ে নাম করা গ্যালারিটিও প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে অনৈতিকতা আর দায়িত্বহীনতার জন্য, তারাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
রাজনীতি আর আইনের নাকি অনেক মারপ্যাঁচ থাকে। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবেননি যে তার কাজগুলো কপিরাইট করা দরকার। কেননা তিনি নিজেকে কোনোদিন শিল্পী বা ভাষ্কর হিসাবে দাবিই করেননি। এ প্রশ্নে বারবারই তাকে বলতে শুনেছি ‘এড়ফ পৎবধঃড়ৎ ও ধস পড়ষষবপঃড়ৎ’ ‘প্রকৃতিই শিল্পী, আমি সংগ্রহ করি মাত্র’।
প্রিয়ভাষিণীকে শিল্পীর মর্যাদা দিয়েছেন আসলে প্রথমে দেশের বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতান, পরে দেশের সাধারণ মানুষ, শিল্পবোদ্ধারা।
আজকে রাশার মাথায় শিল্পী-ভাষ্করের মুকুট পরাচ্ছেন হেডমাস্টার আর সরকারি সংস্কৃতির সাহেবরা। তাদের শক্তি যোগাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ধ, বুদ্ধি বিকলাঙ্গ তথাকথিত শিক্ষিতের পাল।
প্রিয়ভাষিণী কেবল একজন প্রকৃতি-লগ্ন শিল্পীই ছিলেন না। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ করে জয়লাভ করা একটি গর্বিত রাষ্ট্রের গর্বিত অংশীদারদের একজন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত একজন প্রকৃত শিল্পী। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর। অনেক নারী পুরুষের প্রাণের শক্তি। বাংলাদেশের মতো পিছিয়ে থাকা নারীদের দেশে তিনি নিজেই ছিলেন এক দারুণ সাহস, শক্তিশালী ফিলোসফি।
সেই ফিলোসোফি চুরি করে রাশা আজকে দরবেশ সেজেছেন। চুরি করেছে আমার মায়ের কাজ, ভাবনা, শিরোনাম। আর সুধীজনরা কেমন হাততালি দিয়ে বেড়াচ্ছেন দেখুন। এই কি তবে বাংলাদেশের শিল্পকলার সুধীসমাজ?
বাংলাদেশ, নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের দায়িত্বশীল মানুষের কাছেই বিচারের ভার থাকলো।
সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।